একেবারে শুরুতেই দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি। খুনের কিনারা করতে দফায় দফায় তদন্তে এসেছেন কর্তারা। এ সবের মাঝে কেটে গিয়েছে পনেরো দিন। তারাপীঠের বালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগের কোনও দিশা মিলল না এত দিনেও!
বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরে মাঠের মধ্যে খড়ের ছাউনির ভিতরে ওই বালিকাটির দেহ উদ্ধার হয়। তারাপীঠ থানা এলাকার এক গ্রাম থেকে দেহ উদ্ধার হওয়ার দিনেই পুলিশ এলাকার কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে থানায় নিয়ে আসে। আটক করা হয়েছিল ওই বালিকার এক জেঠু এবং পাড়াতুতো এক দাদাকে। পর দিন আবার তাঁদের ছেড়েও দেয়। পুলিশের দাবি ছিল, ওই দু’জনে দেহ খুঁজে পেয়েছিল। মাঠের মধ্যে গভীর রাতে খড়ের ছাউনির মধ্যে ওই দেহ তাঁরাই কী করে আগে দেখতে পেলেন, তা ভাবাচ্ছিল পুলিশকে। সে কারণেই আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি, এই দাবি করে পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ দিকে, ওই ঘটনার এক দিন পরেই মুখ্যমন্ত্রী সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। তারপরে আর তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসেনি বলে একটি সূত্রের দাবি। ঘটনার পাঁচ দিন পরে এলাকায় যায় ফরেন্সিক টিম। ফরেন্সিক তদন্তে নির্যাতিতা বালিকার বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে জেঠুর বাড়ির দাওয়ায় কয়েক ফোঁটা রক্তের দাগ মেলে। ফরেন্সিক তদন্তের টিম সেই নমুনা সংগ্রহ করে। তারপর আর জানা যায়নি কিছুই!
তা হলে ওই বালিকাকে কে বা করা নৃশংস ভাবে খুন করল, সে ব্যাপারে কিছুই কি জানা যাবে না? সিআইডি-র অন্য একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, এখনই হতাশ হওয়ার মতো কিছু নেই। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। নির্যাতিতার পরিবারের অবশ্য দাবি, পুলিশ এবং সিআইডি তদন্তে গড়িমসি করছে।
এ দিকে, যত দিন যাচ্ছে তত গড়াচ্ছে রাজনীতির জল। বিরোধী দলগুলি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছে। পুলিশ এবং সিআইডি-র তদন্তে অখুশি নির্যাতিতার পরিবার বিজেপি-র প্রদেশ নেতৃত্বর কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার পরিবারের দাবিকে সম্মান জানিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আসরে নেমেছে সিপিএমও। নির্যাতিতার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে সিপিএমের সারা ভারত মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদক তথা নানুরের সিপিএম বিধায়ক শ্যামলী প্রধানের নেতৃত্বে প্রকৃত অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে তারাপীঠ থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
এরপরেও পুলিশ বা সিআইডি-র কোনও হেলদোল নেই দেখে এলাকায় দানা বাঁধছে ক্ষোভও। শুক্রবার বিকালে বিজেপি নেতৃত্ব অবিলম্বে অপরাধীকে গ্রেফতারের দাবিতে তারাপীঠে কালো ব্যাজ পড়ে মৌনী মিছিল করেন। পরে তারাপীঠ থানায় স্মারকলিপি জমা দেন নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন বিজেপি-র জেলা নেতৃত্ব কালোসোনা মণ্ডল, আশিস ঘোষ, নির্মল মণ্ডল, রূপা মণ্ডল-সহ অন্যরা।