দিনভর অপেক্ষা, আদালতে এলেন না ফেরার বিধায়ক

কোর্ট চত্বরে টহল দিচ্ছে র্যাফ। লাঠিধারী পুলিশের সংখ্যাও অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। কোর্টের মূল দরজার সামনে বিজেপি নেতা-কর্মীদের জটলা। ভিড় জমেছে সাংবাদিক, আইনজীবীদেরও। কিন্তু, যাঁর জন্য এত অপেক্ষা, সোনামুখীর সেই ফেরার তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা এলেনই না আদালতে। লোকসভা নির্বাচনে বুথে ঢুকে ছাপ্পা ভোট দেওয়ায় অভিযুক্ত দীপালিদেবী এ দিন বিষ্ণুপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন, এই গুঞ্জন ছড়িয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০৩:২৫
Share:

দীপালি সাহা

কোর্ট চত্বরে টহল দিচ্ছে র্যাফ। লাঠিধারী পুলিশের সংখ্যাও অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। কোর্টের মূল দরজার সামনে বিজেপি নেতা-কর্মীদের জটলা। ভিড় জমেছে সাংবাদিক, আইনজীবীদেরও।

Advertisement

কিন্তু, যাঁর জন্য এত অপেক্ষা, সোনামুখীর সেই ফেরার তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা এলেনই না আদালতে। লোকসভা নির্বাচনে বুথে ঢুকে ছাপ্পা ভোট দেওয়ায় অভিযুক্ত দীপালিদেবী এ দিন বিষ্ণুপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন, এই গুঞ্জন ছড়িয়ে গিয়েছিল। তা শুনে সদলবলে বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুর আদালতে চলে এসেছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারও। সঙ্গে দলের কয়েকশো কর্মী। অনেকের হাতে ছিল ‘দীপালির কঠোর শাস্তি’র দাবিতে লেখা প্ল্যাকার্ড। পলাতক বিধায়কের মুখোশও পরে এসেছিলেন কিছু বিজেপি কর্মী। গোটা কোর্ট চত্বরে সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। কেবল তিনিই এলেন না।

কোথায় ছিলেন বিধায়ক?

Advertisement

জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপালিদেবী এ দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন, এমনই ঠিক ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা হয়ে থাকলেও, অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করলে ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে আদালত অনেক সময়ে জামিন দেয়। হয়তো তেমনই আশা ছিল বিধায়কেরও। এ দিন সকালে সোনামুখীর থানাগড়া এলাকার বাড়ি থেকে দীপালিদেবীকে নিয়ে পুলিশই বিষ্ণুপুরে এসেছিল। সামনে পুলিশের ভ্যান। পিছনে ছিল বিধায়কের গাড়ি। কিন্তু কোনও ভাবে বিধায়কের আত্মসমর্পণের খবর ফাঁস হয়ে যায়। বিজেপি আদালত চত্বরে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। সে ক্ষেত্রে আদালত চত্বরে বিধায়ক উপস্থিত হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হত।

পরিস্থিতি বুঝে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। যদুভট্ট মঞ্চের কাছে এসে আদালতের দিকে না গিয়ে বিধায়ক বিষ্ণুপুরেই এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার বাড়িতে যান। সেই সময় আর তাঁর সঙ্গে পুলিশ ছিল না। জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রেও এ কথাই জানা যাচ্ছে।

অপেক্ষা ও বিক্ষোভই সার। সোমবার বিষ্ণুপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেননি
সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা। বিষ্ণুপুর কোর্টে ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

বিজেপি নেতা সুভাষবাবুরও বক্তব্য, “দীপালি সাহার আত্মসমর্পণ করার পরিকল্পনা ছিল। বিষ্ণুপুরে তিনি এসেও ছিলেন। কিন্তু, বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ার ভয়ে তিনি পালিয়েছেন।” তাঁর অভিযোগ, শাসক দলের বিধায়ক হওয়ায় পুলিশ তাঁকে না ধরে বরং নিরাপত্তা দিচ্ছে।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য দাবি করেছেন, এ দিন বিধায়কের আত্মসমর্পণ করার খবর পুলিশের কাছে ছিল না। তা হলে আদালতে কেন র্যাফ মোতায়েন ছিল? এর জবাব পুলিশ সুপার দেননি। জেলার এক পুলিশকর্তার দাবি, কোর্টে বিজেপি জমায়েত করছে জেনে পরিস্থিতি সামাল দিতেই র্যাফ নামানো হয়েছিল।

বিকেল গড়িয়ে গেলেও দীপালিদেবীর দেখা না মেলায় আদালত চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যায় র্যাফ। শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেয় বিজেপি-ও। তবে, দীপালিদেবীকে গ্রেফতারের দাবিতে বিষ্ণুপুরের এসডিপিও পরাগ ঘোষের দফতরে চিঠি দেওয়া হয় বিজেপি-র তরফে।

গত ৭ মে রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোটে সোনামুখীর সাহাপুর বুথে দলবল নিয়ে ঢুকে, ভোটকর্মীদের মারধরে ছাপ্পা ভোট করানোর অভিযোগ ওঠে দীপালিদেবীর বিরুদ্ধে। সোনামুখী থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক জামিনঅযোগ্য ধারায় অভিযোগ করেন বুথের প্রিসাইডিং অফিসার-সহ কিছু ভোটকর্মী। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করলেও বিধায়ক অধরাই। যদিও মাঝেমধ্যেই তাঁকে সোনামুখী এবং আরও বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “দীপালির আত্মসমর্পণ করার কথা ছিল কি না, তা নিয়ে আমার কাছে কোনও খবর নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন