তারাপীঠে দল বদলের অনুষ্ঠান।—নিজস্ব চিত্র।
এক বছর আগে এলাকা ছিল বিরোধী শূন্য। শাসক দল তৃণমূলকেও শূন্য আসন পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। বছর ঘুরতেই সেই বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত কংগ্রেসের হাত থেকে তৃণমূল নিজেদের কব্জায় আনতে সক্ষম হল। ঘটনাটি রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির মাড়গ্রাম ২ পঞ্চায়েতের।
২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১১ আসনের মাড়গ্রাম ২ পঞ্চায়েতে কংগ্রেস সব আসন পেয়েছিল। প্রধান হয়েছিলেন কংগ্রেসের অতসী দাস। শনিবার অতসী দাস-সহ ১১ জন সদস্য তারাপীঠে এক অনুষ্ঠানে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিয়ে দল বদল করেন। শনিবারের ওই অনুষ্ঠানে শুধু অতসী দাস নয়, কংগ্রেস পরিচালিত ২৬ আসনের রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দৌলতুনন্নেষা নুরি-সহ ১২ জন কংগ্রেস সদস্য এবং কংগ্রেসের সমর্থনে থাকা আরও দুই নির্দল সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। যোগ দেন রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের জেলাপরিষদ সদস্য সুনিতি মাল, মাড়গ্রাম ২, দুনিগ্রাম, বুধিগ্রাম, সাহাপুর, বিষ্ণুপুর, হাঁসন ১ এবং হাঁসন ২ পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্যরা। এক কথায় রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির ৯টি পঞ্চায়েতের ১৩২ জন সদস্যসের মধ্যে কংগ্রেসের নির্বাচিত ৫৪ জন সদস্য-সহ পাঁচ জন নির্দল সদস্য এবং একজন সিপিএম সদস্য নিয়ে মোট ৬০ জন পঞ্চায়েত সদস্য, ১৪ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, একজন জেলা পরিষদের সদস্য অনুষ্ঠানে তৃণমূলে যোগ দিলেন।
গত ২১ জুলাই হাঁসন কেন্দ্রের ৫ বারের বিধায়ক তথা জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল দলের সঙ্গে তাঁর ৩৭ বছরের সম্পর্ক ছেদ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শনিবারের অনুষ্ঠানে অন্য তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে অসিত মাল নিজেও উপস্থিত ছিলেন। অসিতবাবু বলেন, “এতদিন ধরে বিধায়ক আছি। এলাকায় বামফ্রণ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করে এতদিন জিতে এসেছি। কিছুটা হলেও এলাকার উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আরও উন্নয়ন করতে চাই। তাই নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল করার জন্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।” অন্য দিকে, মাড়গ্রাম ২ পঞ্চায়েতের প্রধান অতসী দাসের কথায়, “এলাকার বিধায়ক অসিত মাল, স্থানীয় কংগ্রেস নেতা খন্দেকর সফি, মামুন আল রসিদকে দেখে এলাকার কংগ্রেস রাজনীতিতে আসা। তাঁরা যখন কংগ্রেস ছেড়ে চলে গিয়েছেন তখন আমরা কেন আর কংগ্রেসে থাকব।” খন্দেকর সফি অবশ্য দাবি করেছেন, “অসিত মালকে একাধিক বার কংগ্রেস নেতৃত্ব অসম্মান করেছেন। রাজ্যে জোট সরকার গঠনের পর কংগ্রেসের একাংশ তাঁকে মন্ত্রী হতে দেননি। শুধু তাই নয়, তাঁকে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থীও করা হয়নি। এই সমস্ত ক্ষোভ হাঁসন কেন্দ্রের কংগ্রেস কর্মীরা চেপে রেখেছিলেন। ওই সমস্ত কর্মীদের চাপে অসিতবাবু কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।”
রামপুরহাট ২ ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে ফাটল ধরাতে সফল হলেও তাদের মধ্যে যে বিজেপি ভীতি কাজ করছে, তা শনিবারে তারাপীঠে তৃণমূলের জেলাস্তরের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্যে পরিষ্কার ভাবে উঠে এসেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “শুক্রবার রাহুল সিংহ এখানে এসে তৃণমূলের নামে কুত্সা রটিয়ে গিয়েছেন। তিনি কী বলছেন আমি দেখব না।” তিনি দলীয় কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, “আপনারা নিজেদের মধ্যে খাওয়াখাই করবেন না। পাশে থেকে কাজ না করলে দলে ঠাঁই হবে না।” প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “একজন অভিনেতা আপনাদের আই লাভ ইউ বলে সম্বোধন করতে আসছেন। তাঁদের থেকে আপনারা সাবধানে থাকবেন।” তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি অভিজিত্ সিংহ, মত্স্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধায়ক মণিরুল ইসলাম, জেলাপরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর বক্তব্যেও বিজেপিকে প্রতিরোধ করার কথা বলতে শোনা যায়। এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “আসলে এখন বিজেপির উত্থানে জুজু দেখছেন ওঁরা।”