আলাপচারিতা। রামপুরহাটে জনসভার শেষে বীরভূম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র
নরেন্দ্র মোদীর হাওয়ায় বিজেপি এ বার এ রাজ্যে ১০টারও বেশি আসন পাবে বলে দাবি করলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ। লোকসভায় ওই কাঙ্খিত ফল করতে পারলে দু’বছর পরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গড়ার জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে বলেও রাজনাথের আশা। লোকসভা ভোটের প্রচারে রাজ্যে এসে বুধবার এমন আশার কথা বলেই দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন বিজেপি সভাপতি।
কপ্টার-বিভ্রাট এবং জ্বালানির সমস্যায় রাজনাথের কর্মসূচি এ দিন অবশ্য ব্যাহত হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারডুবিতে যেতে পারেননি তিনি। দিল্লিতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য রাজনাথের কপ্টার এ দিন উড়েছিলই দেরিতে। তার জেরে বীরভূমের রামপুরহাটে দলীয় প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে সভার নির্ধারিত সময়ের থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা পরে পৌঁছন তিনি। সভায় আধঘণ্টা বক্তব্য রাখার কথা থাকলেও তিন থেকে চার মিনিটেই বক্তব্য শেষ করেন তিনি। বিপত্তির এখানেই শেষ নয়। এ বার কপ্টারের জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য শুরু হয় অপেক্ষা। সেই ফাঁকেই সভাস্থলে গাড়িতে বসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ দিন রাজনাথ দাবি করেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ১০টার বেশি আসন পাবে এবং আগামী ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গঠন করবে। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলি বিজেপি-র নামে রাজনৈতিক অপপ্রচার করছে। কিন্তু কেন্দ্রে ২৭২টির বেশি আসন পেয়ে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন কি নেবেন? রাজনাথের দাবি, “কেন্দ্রে মোদী সরকার একাই দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়বে। অন্য কারও সমর্থন আমাদের দরকার নেই!”
রাজ্যে এসে রাজনাথের এমন দাবি অবশ্য একযোগে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএম। মোদী-হাওয়ায় রাজ্যে বিজেপি এ বার কোথায় কার ভোট কেটে কার যাত্রা ভঙ্গ করবে, তা নিয়ে সব দলেরই অন্দরে উদ্বেগ রয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে কোনও দলের নেতৃত্বই রাজনাথকে রেয়াত করতে চাননি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “রাজনাথজি’র প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র হাওয়া কোথায় দেখলেন জানি না! দিবাস্বপ্ন দেখছেন! স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “তৃণমূল বলছে ৪২টা আসন পাবে। এখন বিজেপি বলছে ১০টা। এ বার তো রাজ্যের মোট আসনে কুলোবে না দেখছি!” তাঁর আরও বক্তব্য, “উত্তর ভারতের হাওয়া ভৌগোলিক ভাবেই পশ্চিমবঙ্গে এসে দুর্বল হয়ে যায়। বিজেপি-র উত্তুরে হাওয়ার জন্য এখানে তাদের ভোট কিছু বাড়তে পারে। কিন্তু তাতে অত আসন এবং পরে সরকার গড়ার প্রশ্ন নেই।
কেউ দিবাস্বপ্ন দেখতে চাইলে তো কিছু বলার নেই!”
একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “উত্তর ভারত, এমনকী, বিহারের খবর রাখতে পারেন রাজনাথ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক চেহারা কোন দিকে প্রবাহিত হবে, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই ওঁর! তাই এমন হাস্যকর ও ভুল তথ্য মানুষকে দিচ্ছেন!” প্রদীপবাবুর সংশয়, “একটি আসন পায় কি না ঠিক নেই, ১০টার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে!”
বীরভূম কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে ওই সমাবেশে রাজনাথ বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর নামে বা বিজেপির পক্ষে যে ঝড় উঠেছে, তা ভিন্ন নয়, অভিন্ন। দু’টিকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়। মোদীকেই জনগণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছে।” রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে তাঁর বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর বাম রাজত্ব ছিল। পরে মানুষ রাজ্যে পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এ রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজ্যে অনেক গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ। আপনারা আমাদের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন।”
কপ্টারের জ্বালানি আসতে দেরি হবে বুঝে রামপুরহাটের একটি লজে যান রাজনাথ। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরে দুর্গাপুরের রাজবাঁধ থেকে জ্বালানি পৌঁছনোর পর কপ্টার ফের ওড়ার জন্য তৈরি হয়। রাজনাথ ফিরে যান পূর্ণিয়ায়। তবে কালিয়াগঞ্জের সভায় এ দিন শোনানো হয়েছে রাজনাথের মোবাইল-বক্তৃতা। বিজেপি সভাপতি আসবেন না শুনে দলের কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই তখন মাঠ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছিলেন। তখনই রায়গঞ্জের বিজেপি প্রার্থী নিমু ভৌমিকের মোবাইলের স্পিকার অন করে রাজনাথকে বলতে শোনা যায়, “হেলিকপ্টারে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় আমি কালিয়াগঞ্জে যেতে পারলাম না। আপনারা ক্ষমা করে দিন। নিমুবাবুকে জয়ী করুন।” এর পরেই তাঁর আশ্বাস, “বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করলে নিমুবাবুকে মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে। আমি খুব শীঘ্রই কালিয়াগঞ্জে আসার চেষ্টা করছি!”