জেলা শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত আটকানো গেল তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ সদস্যদের। বাতিল হয়ে গেল দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতে অনাস্থার ভোটাভুটি। মঙ্গলবার ছিল এই পঞ্চায়েতে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটি। কোনও সদস্যই না আসায় স্বাভাবিক ভাবেই অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। এতে দলের মুখরক্ষা হল হল মনে করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্লক প্রতিনিধি এ দিন পঞ্চায়েতে উপস্থিত থাকলেও প্রাধন-সহ কোনও পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন না। তাই অনাস্থা পাশ হয়নি। আইন অনুযয়ী আগামী এক বছরের মধ্যে ওই প্রধানের বিরুদ্ধে আর কেউ অনাস্থা আনতে পারবেন না।”
মোট সদস্য সংখ্যা ১১। ৯টি আসন তৃণমূলের। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৃণমূল প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডলের (যিনি ব্লক সভাপতির কাছের লোক বলেই পরিচিত) বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন সাত দলীয় সদস্য। প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস থেকেই বেশ কিছু বিষয় নিয়ে প্রধানের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় দলেরই অন্য সদস্যদের সঙ্গে। পঞ্চায়েতের কাজের হিসেব চেয়ে কয়েকটি আরটিআই হয়। কিছুদিন আগে নিখিল বাউড়ি নামে এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের মৃত্যুর পরই প্রধানের বিরুদ্ধে অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়। ২৯ ডিসেম্বর অনাস্থা প্রস্তাব আসে। ভোটাভুটি আটকানোর জন্য দলের চেষ্টা সত্ত্বেও বিক্ষুব্ধ সদস্যদের আটকানো যায়নি। বরং ৩১ ডিসেম্বর দুবরাজপুরের যুগ্ম বিডিও অসিতকুমার বিশ্বাসের কাছে ৭ সদস্যই জানিয়ে দেন, অনাস্থায় সই তাঁরা স্বেচ্ছায় করেছেন।
দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে দলের সদস্যরাই এ ভাবে অনাস্থা অনায় বিষয়টি নিয়ে প্রবল অস্বস্তি ছিল তৃণমূলের মধ্যে। অস্বস্তি আরও বাড়ে যখন ৫ জানুয়ারি রাতের অন্ধকারে এক বিক্ষুব্ধ মহিলা সদস্য তোফা বাদ্যকর ও তাঁর স্বামীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল প্রধানের বিরুদ্ধেই।
এর পরেই হস্তক্ষেপ করতে হয় খোদ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। গত শনিবার বোলপুরে বিক্ষুব্ধ সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসেন তিনি। ঠিক হয় দলই প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তারপরই ভোটাভুটির দিন তাঁরা অনুপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ৬ সদস্য। সরাসরি সে কথা স্বীকার না করলেও বিষয়টি যে সত্যি সেটা কার্যত মেনে নিয়েছেন দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র। তিনি বলেন, “প্রধানের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল ওই সদস্যদের। সেটা মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তাই ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়ায়নি।” কেন ভোটাভুটির দিন এলেন না? বিক্ষুব্ধ সদস্যরা অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। আড়ালে তাঁরা বলছেন, “দলে থেকে দলের নির্দেশ মানা ছাড়া উপায় কী! যেখানে খোদ জেলা সভাপতি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।” অন্য দিকে, প্রথম থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগই মানতে চাননি প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডল। এ দিনও তিনি বললেন, “আমি ভাল কাজ করেছি, তাই দল পাশে দাঁড়িয়েছে।” তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, “প্রধানকে দলই সরিয়ে দেবে। এমন সিদ্ধান্ত দলগতভাবে নেওয়া হয়েছে।”