তিনটি পৃথক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দুই যুবকের। দুই পুলিশকর্মী-সহ বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। মৃতেরা হলেন ময়ূরেশ্বরের মালঞ্চি গ্রামের চন্দ্রাম হেমব্রম (২০) ও মহম্মদবাজার থানার মুরালপুরের ভাগাবাঁধ গ্রামের কল্যাণ দাস (২০)।
এই দুর্ঘটনাগুলিকে ঘিরে ময়ূরেশ্বর কিংবা মহম্মদবাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি না হলেও, একটি পাথর বোঝাই লরির ধাক্কায় এক মোটরবাইক আরোহীর জখম হওয়ায়কে কেন্দ্র করে তেতে উঠল সিউড়ি শহর। চলল পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর। গাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টাও করেছিলেন বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টা নাগদ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি শহরের এসপি মোড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদবাজার থেকে সিউড়ি শহরের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ঢুকছিল পাথর বাঝাই দশ চাকার একটি লরি। এসপি মোড়ের কাছে লরিটি সন্দীপ সাহা নামে সিউড়ির হুসনাবাদের বাসিন্দা এক বাইক আরোহীকে ধাক্কা মারে। তার পরেই উত্তেজিত জনতা গাড়িটিতে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ এলাকায় এলে, নো-এন্ট্রি বোর্ড লাগানো সত্ত্বেও ভারি গাড়ি শহরে রাত ৯টার আগে কেন ঢুকছে, এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাগযুদ্ধ বেধে যায় জনতার। কেউ কেউ সেই সময়ে লরিটিতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে শুরু করে। ওই সময় জনতার পাশাপাশি কয়েকজন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির উপরেও লাঠির ঘা পড়ে বলে অভিযোগ। এর পরেই সিউড়ি থানার আইসি-র গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। ফের লাঠিচার্জ করে রাস্তা থেকে লরিটিকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। জখম ব্যক্তি সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে আনিচ্ছিকৃত ভাবে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির উপর লাঠির আঘাত লাগায় ভুল হয়েছে, বলে স্বীকার করে নেয় পুলিশ। পুলিশ জানায় ওই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অন্য দিকে, শুক্রবার দুপুরে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে, ময়ূরেশ্বর থানার মল্লারপুর রায়পাড়া মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় চন্দ্রাম হেমব্রম (২০) নামে এক যুবকের। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই ট্রাকটি জাতীয় সড়কের উপর কর্তব্যরত পুলিশের গাড়িকে ধাক্কা মারলে মল্লারপুর ফাঁড়ির দুই পুলিশ কর্মী জখম হন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন মদ্যপ অবস্থায় পাথরভর্তি ট্রাক চালাচ্ছিলেন চালক। মল্লারপুর রায়পাড়া মোড়ের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে ট্রাকটি একটি ইট ভর্তি ট্রাক্টরে ধাক্কা মারলে ইট পড়ে যায়। তখন ট্রাক্টরের খালাসি চন্দ্রাম হেমব্রম ইটের তলায় চাপা পড়ে যায়। ট্রাক্টর চালক গুরুতর জখম হন। পরে ট্রাকটি মল্লারপুর বটতলা মোড়ে সিউড়িগামী একটি বাসে ধাক্কা মেরে থেমে যায়। চালক পালিয়ে গেলেও ট্রাকের খালাসিকে আটক করেছে পুলিশ। এ দিনই মহম্মদবাজারের তালবাঁধ এলাকায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন খাদানকর্মী কল্যাণ দাস। সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। এই দুর্ঘটনার পরে গাঁওতার লোকজন ওই খাদানের কাজকর্ম বন্ধ করে দেন। গাঁওতা সম্পাদক রবীন সোরেন বলেন, “কী ভাবে মৃত্যু হল তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে ওই খাদানের কাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে খাদান কতৃপক্ষের কাছে।”