পরপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে অবাধ লুঠ বড়জোড়ায়

পুলিশ ফাঁড়ি থেকে দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এই দূরত্বের মাঝে পথ আটকে ছিনতাই চললো প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে। একের পর এক গাড়ি, মোটরবাইক আটকে অবাধে দুষ্কৃতীরা চাললো লুঠপাট। টেরও পায়নি পুলিশ। রবিবার রাতের এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে বড়জোড়া থানার মালিয়াড়া এলাকায়। দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে পথ অবরোধে নামেন সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরাও। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “কয়েক জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা একটি দল গঠন করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৬
Share:

পুলিশ ফাঁড়ি থেকে দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এই দূরত্বের মাঝে পথ আটকে ছিনতাই চললো প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে। একের পর এক গাড়ি, মোটরবাইক আটকে অবাধে দুষ্কৃতীরা চাললো লুঠপাট। টেরও পায়নি পুলিশ। রবিবার রাতের এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে বড়জোড়া থানার মালিয়াড়া এলাকায়। দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে পথ অবরোধে নামেন সাধারণ মানুষ। বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরাও। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “কয়েক জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা একটি দল গঠন করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।”

Advertisement

মালিয়াড়া থেকে দুর্গাপুর। এই রাস্তা দিয়ে বাস খুব একটা চলাচল করে না। তবে দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে মালিয়াড়া, লাগাপাড়া, গঙ্গাজলঘাটি থেকে দুর্গাপুর যাওয়া-আসার জন্য বহু মানুষ এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে একটানা রাত দশটা পর্যন্ত এই রাস্তায় ছিনতাই চালায় দুষ্কৃতীরা। প্রথমে তাদের পাল্লায় পড়ে দুর্গাপুর থেকে লাগাপাড়াগামী ছাত্রীদের একটি গাড়ি। কোচিং সেন্টার থেকে তিনজন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ওই গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিল। গাড়িতে ছিলেন এক ছাত্রীর মা কৃষ্ণা সানা। তিনি লাগাপাড়ার এমটিপিএস কলোনির বাসিন্দা। জানালেন, দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তাঁদের গাড়িটি মেটালি গ্রাম সবে পেরিয়েছে। এমন সময় রাস্তায় একটি খেজুর গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখা যায়। এলাকাটি সুনসান। রাস্তার পাশে ঝোপঝাড় রয়েছে। দাঁড়িয়ে পড়তেই জনা আটেক যুবক গাড়িটিকে ঘিরে ফেলে। তাদের কারও হাতে পিস্তল, কারও হাতে ভোজালি। দু’জনের মুখ রুমালে বাঁধা ছিল। পালানোর চেষ্টা করলে গুলি করে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং যা আছে সব দিতে বলে দুষ্কৃতীরা। কৃষ্ণাদেবী বলেন, “গাড়িতে ছাত্রীরা আছে। তাদের উপরে কোনও অত্যাচার যেন না করা হয়। এরপর সোনার হার, কানের দুল, হাতের পলা ও নোয়াবাঁধানো খুলে দিই।” গাড়ির ভিতরে থাকা একটি মেয়ে তার কানের দুলও খুলে দুষ্কৃতীদের হাতে দেয়।

এর পর আরও একটি গাড়ি কৃষ্ণাদেবীদের গাড়ির পিছনে এসে দাঁড়ায়। একই ভাবে দুষ্কৃতীরা সেই গাড়িতেও ছিনতাই চালানো শুরু করে। দুর্গাপুরে মেয়ের বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে ফিরছিলেন লাগাপাড়ার বাসিন্দা ভবতারণ ঢাং। দুষ্কৃতীরা গাড়ির দরজা খুলে জামার কলার ধরে তাঁকে নামায়। কপালে পিস্তল রেখে তাঁর পকেট থেকে নগদ কয়েক হাজার টাকা বের করে নেয়। কেড়ে নেয় মোবাইল ফোনও। যদিও ভবতারণবাবুর আনুরোধে তাঁর মোবাইলটি ফিরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। তবে অনেকেরই মোবাইল কেড়ে নেয় তারা। আবার অপেক্ষাকৃত কম দামের বহু ফোন ছুড়ে ভেঙে দেয়। একের পর গাড়ি ও বাইক আটকে পড়তে থাকে রাস্তায়। দুষ্কৃতীরা ছিনতাই চালাতে থাকে। বাইক আরোহীদের বাইক থেকে নামিয়ে গাড়ির মধ্যে চুপ করে বসে থাকতে বলে। ছিনতাই চলাকালীন গাড়ি ও বাইকের চাবি খুলে নিচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়া মালিয়াড়ার বাপি মহাদানি, পিন্টু ধিবরদের ক্ষোভ, “রাস্তায় একের পর এক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রথমে হাতির উপদ্রব হবে বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা গাড়ির দরজা খুলে আমাদের বের করার পরে সেই ভুল ভাঙল। প্রায় ২০-২২টি গাড়ি ও প্রায় ১৫ জন বাইক আরোহী ছিনতাইয়ের মুখে পড়ে।” তবে এক বাইক আরোহীর কাছ থেকে আংটি খুলে নিতে গেলে তিনি প্রতিবাদ করেন। তখন দুষ্কৃতীরা তাঁকে মারতে উদ্যত হলে বাইক আরোহী দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে অন্ধকারে গা ঢাকা দেন। এর পরেই দুষ্কৃতীরাও চম্পট দেয়।

Advertisement

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনার খবর পেয়ে রাস্তা সংলগ্ন উপরসোল, মেটালি, ন’পাড়ার গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে আসেন। গাছের গুঁড়ি সরিয়ে দেন। তার পরেই গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশ অনেক পরে আসে। থানার এক কাছাকাছি এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, অথচ পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারল না। এই ক্ষোভে মালিয়াড়ায় বড়জোড়া-দুর্লভপুর রাস্তা অবরোধ করেন বাসিন্দারা। রামদাস চন্দ্রধূর্য, ফকির তিওয়ারি, জয়ন্ত চন্দ্রধূর্য, বাপি মহাদানিরা বলেন, “মানুষের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল এই ঘটনায়। তিন কিলোমিটার দূরে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত লোকজন যাতায়াত করেন। কিন্তু পুলিশ কোনও নজরদারি চালায় না।”

এই রাস্তাটিতে এর আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। দুষ্কৃতীদের ধরতে হবে দাবি তুলে এ দিন সকালে মালিয়াড়া পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বড়জোড়া ব্লকের সভাপতি সুভাষ মণ্ডল। তিন দিনের মধ্যে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে না পারলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement