ইঁদপুরে জোড়া খুনের তদন্তে দাবি পুলিশের

বিকাশকে মারার ছক হয়েছিল মদের আসরে

তৃণমূল নেতা বিকাশ দত্ত ও তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে খুন করার আগে আততায়ীরা একসঙ্গে মদের আসরে বসেছিল। সেখানেই কেউ কেউ ইঁদপুরের হাটগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বিকাশবাবুকে খুনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু, তাঁর বাবা মুকুন্দবাবুকে খুনের আগাম পরিকল্পনা ছিল না। ঘটনাচক্রে তিনি ছেলের সঙ্গে থাকায় তাঁকেও খুন করে আততায়ীরা। জোড়া খুনের ঘটনায় ধৃতদের জেরা এই তথ্য জানা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইঁদপুর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৬
Share:

সোমবার খাতড়া আদালতে বাপি কর্মকার। —নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল নেতা বিকাশ দত্ত ও তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে খুন করার আগে আততায়ীরা একসঙ্গে মদের আসরে বসেছিল। সেখানেই কেউ কেউ ইঁদপুরের হাটগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বিকাশবাবুকে খুনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু, তাঁর বাবা মুকুন্দবাবুকে খুনের আগাম পরিকল্পনা ছিল না। ঘটনাচক্রে তিনি ছেলের সঙ্গে থাকায় তাঁকেও খুন করে আততায়ীরা। জোড়া খুনের ঘটনায় ধৃতদের জেরা এই তথ্য জানা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

শনিবার রাতে বাড়ি থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে নিজেদের ধান জমিতে জল দিতে গিয়ে খুন হন বিকাশবাবু ও তাঁর বাবা। ওই রাতেই দু’জনের গলার নলিকাটা দেহ উদ্ধার হয় হাটগ্রাম সংলগ্ন শ্মশান এলাকার ডোবা থেকে। ওই ঘটনায় গ্রামেরই সাত জনের নামে থানায় এফআইআর দায়ের করেন নিহত বিকাশবাবুর ভাইপো বিপ্লব দত্ত। মূল অভিযোগ ছিল ওই গ্রামেরই বাসিন্দা বাপি প্রামাণিকের বিরুদ্ধে। রবিবার খুনের তদন্তে নেমে বাপি-সহ অভিযুক্ত ছ’জনকে আটক করে পুলিশ। সোমবার আটক ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে খাতড়া আদালতে পেশ করা হয়। আদালত ধৃতদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাপি ছাড়া অন্য পাঁচ ধৃত হল ধনঞ্জয় প্রামাণিক (বাপির ভাই), বাবলু প্রামাণিক, সুবল দত্ত, গৌরাঙ্গ নন্দী ও তাপস প্রামাণিক। এফআইআরে নাম থাকা আর এক অভিযুক্ত গুণধর নন্দী অবশ্য পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বাঁকুড়া জেলায় আলোড়ন ফেলে দেওয়া এই জোড়া খুনের ঘটনার দ্রুত কিনারা নিয়ে প্রথম থেকেই চাপ ছিল পুলিশের উপরে। রবিবার হাটগ্রামে গিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ-ও নিহতদের পরিবারকে দ্রুত অপরাধীরা ধরা পড়বে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। সোমবার জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ধৃতদের মধ্যে অনেকেই এই খুনের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশি জেরার মুখে কবুল করেছে। আমরা তদন্ত চালাচ্ছি।” পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই খুনের ঘটনায় আরও তিন জনের নাম উঠে এসেছে। তাদের তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

ওই জোড়া খুনে জড়িত সন্দেহে সোমবারও ৮ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন হাটগ্রামেরই এক হাতুড়ে ডাক্তার। পুলিশের একটি বিশেষ সূত্রে খবর, খুন হওয়ার আগে সঙ্গে থাকা লোহার ‘পাঞ্চ’ নিয়ে আততায়ীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ লড়াই করেছিলেন তৃণমূল নেতা বিকাশবাবু। তাঁর ‘পাঞ্চ’-এর আঘাতে এক জন আততায়ী জখমও হয়। ওই ‘পাঞ্চ’-এ রক্তের দাগ মিলেছে বলেও পুলিশের একটি বিশেষ সূত্রের খবর। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, গ্রামের ওই হাতুড়ে পাঞ্চের ঘায়ে জখম ব্যক্তির চিকিত্‌সা করেছিলেন। যদিও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি জেলার পুলিশকর্তারা।

এই খুনের পিছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে বলে প্রথম থেকেই দাবি করছিলেন বিকাশবাবুর দাদা নীতীশ দত্ত। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও সেই তথ্যই উঠে এসেছে। বিশেষ করে বিকাশবাবুর উপরে নানা কারণে বাপি প্রামাণিকের রাগ ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, গ্রামে একটা সেলুন থাকলেও বাপি নানা ধরনের অসামাজিক কাজে যুক্ত। একাধিক বার পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছে। বাপি-সহ ধৃত ছ’জনকে রবিবার রাতভর পুলিশ জেরা করে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ধৃতদের কয়েক জন কবুল করেছে, খুন করার আগে তারা এক সঙ্গে মদের আসরে বসিয়েছিল। নিহত বিকাশবাবুর প্রতি গ্রামের কিছু লোকের ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল। মদের আসরে তাদের কেউ কেউ বিকাশবাবুকে খুন করার প্রস্তাব দেয়। এতে আসরে উপস্থিত বাকিরা সম্মতি জানায়। এর পরেই খুনের ছক কষা হয় বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সুপার বলেন, “তদন্তের কাজ শেষের মুখে। তাই এখনই এ নিয়ে আমরা কিছু বলতে চাইছি না। সামনের কয়েক দিনের মধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত অন্য অপরাধীরা ধরা পড়বে।”

বিকাশবাবুর মৃত্যুতে এ দিনও হাটগ্রামে ছিল শোকের পরিবেশ। দিনভর গ্রামে দফায় দফায় পুলিশ টহল দিয়েছে। নীতীশবাবুর কথায়, “পরিবারের দু’টি প্রাণ অকালে চলে গেল। গোটা পরিবার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে। কী ভাবে সব স্বাভাবিক হবে, বুঝতে পারছি না।” দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি তুলেছে মৃতের পরিবার। ইঁদপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি অসিত লায়েক বলেন, “এলাকার তৃণমূল কর্মীরা এবং সধারণ মানুষ এখনও এই ঘটনা বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না। আমরা চাই, অপরাধীরা দ্রুত ধরা পড়ুক। তবে, পুলিশ যে ভাবে তদন্ত করছে, তাতে আমরা খুশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন