বিধায়ক হিসাবে দাবি মেটাতে আন্দোলন: স্বপনকান্তি

মুকুল-বিড়ম্বনার মধ্যে দলের বিরুদ্ধে ফের মুখ খুলে রাতারাতি রাজ্য-রাজনীতির শিরোনামে এসেছিলেন সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। জানিয়ে দিয়েছিলেন, “বিধায়ক পদ গেলে যাবে, দুর্নীতি নিয়ে আপস করব না!” বুধবার সিউড়ি পুরসভার আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে বিধানসভায় ধর্নায় বসে দলের কোপে পড়েও এ বার তাঁর পাশে দাঁড়াল জেলা সদর।

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায় ও ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০৪
Share:

মুকুল-বিড়ম্বনার মধ্যে দলের বিরুদ্ধে ফের মুখ খুলে রাতারাতি রাজ্য-রাজনীতির শিরোনামে এসেছিলেন সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। জানিয়ে দিয়েছিলেন, “বিধায়ক পদ গেলে যাবে, দুর্নীতি নিয়ে আপস করব না!” বুধবার সিউড়ি পুরসভার আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে বিধানসভায় ধর্নায় বসে দলের কোপে পড়েও এ বার তাঁর পাশে দাঁড়াল জেলা সদর।

Advertisement

দল অবশ্য তাঁকে সাসপেন্ড করেছে। এ দিন দুপুরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হল। তিনি বলেন, “দলের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে অন্য দলের উসকানিতে যে কাজ তিনি করেছেন তা ঠিক নয়।” যদিও দলের মহাসচিবের ঘোষণার আগে স্বপনবাবু জানিয়েছিলেন, তাঁকে সাসপেন্ড করলে তিনি কষ্ট পাবেন। বরং বহিষ্কৃত হলেই খুশি হবেন। এ দিনই বিধায়কের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কেন এমন বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নিলেন স্বপনবাবু?

Advertisement

সিউড়ির জল প্রকল্পের দুর্নীতির প্রতিবাদে বুধবার ধর্নায় বসার কয়েকদিন আগে এক ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেন, “বলতে পারেন বাবার পথ অনুসরণ করেই রাজনীতিতে আসা। অবশ্য শুধু বাবার পথ অনুসরণ বললে ভুল হবে। বাবার পথ অনুসরণের পাশাপাশি সিপিএমের গুটিকয়েক নেতার অত্যাচারে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।” বীরভূম জেলার বিশিষ্ট শিল্পপতি নিতাইপদ ঘোষের ছোট ছেলে স্বপন, পড়াশুনা শেষে বাবার শিল্প ব্যবসায় যুক্ত হন। ব্যবসা দেখার পাশাপাশি বাবার মতো তিনিও রাজনীতির উঠোনে পা রাখেন ২০০৪ সালে। সিউড়ির ময়ূরাক্ষী নদীর তিলপাড়া জলাধারের উত্তরপাড়ে খয়রাকুড়ি গ্রামে স্বপনবাবুদের আসল বাড়ি। তাঁর বাবা প্রয়াত নিতাইপদ ঘোষ ১৯৫৫-৫৬ সালে মহম্মদবাজারের কুমারতুর মৌজায় সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে খড়িমাটি উত্‌পাদন শুরু করেন। কংগ্রেস দলের সঙ্গে নিতাইপদবাবুর ঘনিষ্টতা বাড়ে। তিনি ১৯৬৪-৬৫ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে কংগ্রেস করা শুরু করেন। সাতাত্তর সালে মহম্মদবাজার ও ১৯৮২ সালে দুবরাজপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে হেরে যান। এরপরই ১৯৮৬-৮৭ সালে নিতাইপদবাবু রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেন।

বাবার মতোই কংগ্রেসে যোগ দিয়ে নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৪ বোলপুরের এক সভায় প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির হাত থেকে কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০০৬ সালে সিউড়ি বিধানসভা থেকে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান। কিন্তু সিপিএমের কাছে ২০ হাজার ভোটে হেরে যান। রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের প্রভাব বাড়ায় এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধায় লোকসভা নির্বাচনে স্বপনবাবুর ফের ভোটে দাঁড়াবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। জেলার রাজনৈতিকমহল মনে করে, বীরভূম কেন্দ্রের আসনটি তৃণমূল সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় স্বপনবাবুর সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। দলীয় নির্দেশে তিনি তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের হয়েই প্রচারে নামেন। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তাঁর।

পরে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে, ধর্মতলার সভায় ২০০৯ সালের ২৮ অগস্ট তৃণমূলে যোগদেন স্বপনবাবু। রাজ্য প্রদেশ তৃণমূলের সম্পাদক ও উত্তর দিনাজপুরের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। ২০১১ সালে সিউড়ি বিধানসভা এলাকার ভোটে জেতেন তিনি। সে সময় এলাকার দাবি ছিল, অবিলম্বে সিউড়ির জলপ্রকল্প বাস্তবায়িত করার।

স্বপনবাবু সেই দাবিতেই এ দিনও অনড়। তিনি বলেন, “বিধায়ক হিসাবে এটা আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে বার বার সিউড়ির পুরপ্রধানকে বলেও কোনও লাভ হয়নি। জল প্রকল্পের অর্থ তছরুপ নিয়ে পুরমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী সকলের কাছে সবিস্তার জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সুফল মেলেনি। বিধায়ক হিসাবে এলাকার দাবি নিয়ে আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন