পাত্রসায়র

বিনোদনের স্বাদ দেবে ডান্না দিঘি

অত্যাধুনীক বিনোদনের জায়গা দূরঅস্ৎ, নিদেন পক্ষে একটা পার্কও ছিল না। এ নিয়ে কম আক্ষেপ ছিল না পাত্রসায়রবাসীর। এ বার সেই আক্ষেপ দূর হতে চলেছে। বাইপাসের ধারে পাত্রসায়রের ডান্না দিঘিকে ঘিরে গড়ে উঠছে আস্ত একটা পর্যটনকেন্দ্র। পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, পাত্রসায়র-বিষ্ণুপুর বাইপাস রাস্তার পাশেই প্রকাণ্ড এই দিঘি। সরকারি ভাবে বিউর বেতুড় পঞ্চায়েতের ডান্না মৌজায় অবস্থিত এই দিঘির আয়তন বর্তমানে প্রায় ৫৮ একর।

Advertisement

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১৪
Share:

ভোল বদলের পথে। এই দিঘিকে ঘিরেই পার্ক, ফল-ফুলের বাগান থেকে জলবিহারের মতো গুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ছবি: শুভ্র মিত্র

অত্যাধুনীক বিনোদনের জায়গা দূরঅস্ৎ, নিদেন পক্ষে একটা পার্কও ছিল না। এ নিয়ে কম আক্ষেপ ছিল না পাত্রসায়রবাসীর। এ বার সেই আক্ষেপ দূর হতে চলেছে। বাইপাসের ধারে পাত্রসায়রের ডান্না দিঘিকে ঘিরে গড়ে উঠছে আস্ত একটা পর্যটনকেন্দ্র।

Advertisement

পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, পাত্রসায়র-বিষ্ণুপুর বাইপাস রাস্তার পাশেই প্রকাণ্ড এই দিঘি। সরকারি ভাবে বিউর বেতুড় পঞ্চায়েতের ডান্না মৌজায় অবস্থিত এই দিঘির আয়তন বর্তমানে প্রায় ৫৮ একর। এর মধ্যে জলাশয় ৩৩ একরের, বাকি ২৫ একর দিঘির চারপাশের পাড়। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এই দিঘির জল জমির সেচ থেকে বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার হয়। দিঘিতে মাছ চাষও হত। দিঘির পাড়ে ইটভাটা রয়েছে।

পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতি জানাচ্ছে, এ বার সেই ছবি বদলাতে চলেছে। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে পঞ্চায়েত সমিতি গত বছর দিঘি সংস্কারের পাশাপাশি একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই কাজই এখন শুরু হয়েছে। টইটম্বুর দিঘিতে ঘুরবে বোট, পাড়ে সবুজ ঘাসের উপর সাজানো থাকবে রঙ বাহারি ফুলের গাছ। পাড়ের একদিকে পার্ক ও ফোয়ারা তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। ফুল-ফলের বাগানের সঙ্গে হাঁস ও মুরগি প্রতিপালনের জন্য দু’টি ফার্ম-ও তৈরি করা হবে। দিঘি সংস্কারের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। এ বার দিঘির সৌন্দার্যায়নের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশাবাদী প্রশাসন।

Advertisement

পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “প্রথমে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে মাটি খনন করে দিঘির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হয়েছে। তারপর দিঘির চারপাশে বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। শিশুদের খেলার পার্ক, জলে বোটিং এবং পার্কে ফোয়ারা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।” তিনি জানান, দিঘিতে মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ের একদিকে হাঁস ও মুরগি প্রতিপালনের ফার্ম, রেস্ট হাউস, যোগ ব্যায়াম কেন্দ্র, জৈব সার তৈরির একটি ইউনিট, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে।

বিডিও জানান, দিঘির আমূল সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিল, পর্যটন, উদ্যানপালন, মৎস্য ও কৃষি দফতরের কাছ থেকে এ ব্যাপারে অর্থ সাহায্য মিলেছে। পাশাপাশি জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির বিভিন্ন তহবিল থেকেও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। বন সৃজন প্রকল্পে ১৪০০ আম চারা, ৪৫৩টি নারকেল, ৪০০টি সুপারি, ৪০০টি কলাগাছ লাগিয়ে চারটি পৃথক পৃথক ফলের বাগান তৈরি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ৫০ বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, দিঘির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার, দিঘির পাড়ে একটি হলঘর, স্নানাগার, পার্ক গড়ার পাশাপাশি দিঘির জলে মৎস্য দফতর থেকে যৌথ ভাবে মাছ ছাড়ার, উদ্যান পালন দফতর থেকে হাঁস চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দিঘির ওই কাজের জন্য ইতিমধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কৃষি আধিকারিক, মৎস্য আধিকারিক, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং মালিকপক্ষ ও চাষিদের নিয়ে ১২ জনের একটি কমিটি গড়া হয়েছে। তাঁরা ওই কাজ দেখাশোনা করছেন।

সম্প্রতি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল ভোল বদলে গিয়েছে পাত্রসায়র-ডান্না দিঘির। দিঘির পাড়ে ইট ভাটার সারি আর নেই। উঁচু নিচু এবড়ো খেবড়ো পাড় মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। ছোট ছোট ফুল, ফলের গাছে ভরে উঠেছে চারিদিকের পাড়। দিঘিতে লিজ নিয়ে যাঁরা মাছ চাষ করছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ডান্না গ্রামের সনৎ দে বলেন, “যে ভাবে ডান্না দিঘিকে ঘিরে সামগ্রিক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে, তাতে এলাকার চিত্রটাই বদলে যাবে।” দিঘিকে ঘিরে এই কর্মকাণ্ডে খুশি এলাকার মানুষজন। পাত্রসায়রের বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবীপ্রসাদ দত্ত, চন্দন দত্ত বলেন, “এতবড় দিঘি এলাকার সম্পদ। দিঘির সৌন্দর্যায়নের কাজে আমরা খুশি। সুন্দর একটা বেড়ানোর জায়গা হচ্ছে।”

তৃণমূল পরিচালিত পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুচাঁদ দাস বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই ওই জায়গা সাজানোর পরিকল্পনা ছিল আমাদের। এ জন্য দিঘির মালিক ও মৎস্য চাষিরাও সাহার্য্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সকলের সহযোগিতায় আমরা দিঘিকে সাজিয়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু করেছি।” বিডিও বলেন, “অনেক বড় পরিকল্পনা, প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই ধাপে ধাপে কাজ করা হচ্ছে। সময় লাগবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন