বেহাল ট্রাফিক, যানজটেই থমকে সিউড়ি

জেলা সদরে এই দৃশ্য কোনও নতুন ঘটনা নয়। দিনরাত নিয়ম ভাঙার এই ছবি সিউড়ি শহরের পরিচিত একটি দৃশ্য। বস্তুত, যান চলাচলের ক্ষেত্রে নিয়ম না মানাটাই যেন এ শহরের ‘ট্রাফিক-রুল’! নিয়মভাঙার নীতিতে এগিয়ে থাকতে সকলেই যেন সকলকে টেক্কা দিতে চায়।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৮
Share:

দৃশ্য ১: সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড। রাস্তা দিয়ে মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। পরিচিত কেউ একজন ডাকতেই মাঝ রাস্তাতেই ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়লেন ভদ্রলোক। বেশ কয়েক মিনিট ধরে চলল খোসমেজাজে গল্প।

Advertisement

দৃশ্য ২: সিউড়ি পুরসভা মোড়। ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় যানজট। অথচ ট্রাফিক কিয়স্কে কোনও পুলিশ নেই। নেই আশেপাশেও।

জেলা সদরে এই দৃশ্য কোনও নতুন ঘটনা নয়। দিনরাত নিয়ম ভাঙার এই ছবি সিউড়ি শহরের পরিচিত একটি দৃশ্য। বস্তুত, যান চলাচলের ক্ষেত্রে নিয়ম না মানাটাই যেন এ শহরের ‘ট্রাফিক-রুল’! নিয়মভাঙার নীতিতে এগিয়ে থাকতে সকলেই যেন সকলকে টেক্কা দিতে চায়। অথচ অভিযোগ, না ঠেকাতে পুলিশ-প্রশাসনের কোনও নজরদারিই নেই। আবার যে অল্প সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ শহরে দেখা যায়, প্রয়োজনের তুলনায় তা-ও পর্যাপ্ত নয়। ট্রাফিক নিয়ম ভাঙলেও প্রায় ক্ষেত্রেই আবার ওই সব পুলিশকে তেমন তত্‌পর হতেও দেখা যায় না বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে যানজটে জেরবার হয়ে প্রায় দিন রুদ্ধ হয়ে থাকে গোটা শহর। প্রয়োজনের সময় যানজটে আটকে দুর্ভোগের শেষ থাকে না সাধারণ মানুষের। প্রশাসনিক কর্তা থেকে বাসিন্দা, মনে করছেন, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতিই শহরকে যানজট মুক্ত করার প্রধান উপায়।

Advertisement

রোজদিন কেমন থাকে শহর?

শহরের বেশ কিছু বাঁকে নো-এন্ট্রি বোর্ড লাগানো রয়েছে। অথচ তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই দিব্যি চারচাকা, দু’চাকা নিয়ে আরোহীরা ঢুকে পড়ছেন রাস্তায়। আবার রাস্তায় ডিভাইডার দেওয়া। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ডান দিকের গাড়ি বাম দিকে, বাম দিকের গাড়ি ডান দিকে দিয়ে যাতায়াত করছে। কখনও কখনও দু’লেনের রাস্তায় নিয়ম ভেঙে এক দিকের গাড়িই যাতায়াত করছে। শহরে অতীতের বহু দুর্ঘটনাই সাক্ষী, পথচারিই হোন বা বাইক আরোহী, ছোট বড় গাড়ির চালক সিউড়ির রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলেন না প্রায় কেউ-ই। বাসিন্দাদের দাবি, প্রাচীন এই পুরশহর বীরভূমের সদর হলেও এ পর্যন্ত আধুনিক নিয়ন্ত্রিত যানচলাচল ব্যবস্থার কোনও পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি সিউড়িতে। তাঁদের ক্ষোভ, পুরসভা বা পুলিশ-প্রশাসন কোনও পক্ষই এ ব্যাপারে নজর না দেওয়াতেই শিথিল হয়ে পড়েছে শহরের যান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ট্রাফিকের নিয়ম কানুন রাস্তায় অটুট রাখা দূর অস্ত, নাগরিকদের এ নিয়ে সচেতন করতেও তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে প্রায়দিন এ শহরে ছোটবড় দুর্ঘটনা লেগে রয়েছে। পুরবাসীদের দাবি, গোটা শহর দূর অস্ত, শহরের মূল রাস্তাতেও সব সময় যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা নেই। দিনের ব্যস্ততম সময় শহরের মূল রাস্তায় কেবল সকাল ১০টা থেকে ঘণ্টা কয়েকের জন্য বেশ কয়েকটি জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলে। বাকি সময় পুলিশ কিয়স্কগুলি ফাঁকাই পড়ে থাকে। এমনকী, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগনালিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বছর কয়েক আগে খুঁটি পোঁতা হলেও তা আজও চালু হয়নি!

বেহাল যানজট চিত্র

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

কী বলছে পুলিশ?

জেলাপুলিশের শীর্ষ কর্তাদের যুক্তি, মূল সমস্যা জেলায় ট্রাফিক পুলিশের ঘাটতি। হিসেব অনুযায়ী গোটা জেলায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছেন মাত্র এক এসআই, ৬ এএসআই, ৯ কনস্টেবল এবং ৫২ এনভিএফ! এঁদের মধ্যে সিউড়ি জেলা সদরের জন্য রয়েছেন এক এসআই, তিন এএসআই, সাত কনস্টেবল এবং তেরো জন হোমগার্ড। অথচ ওই পুলিশের কর্তারা মেনে নিচ্ছেন, শুধু মাত্র জেলা সদরের দায়িত্ব সামলাতেই জেলার জন্য বরাদ্দ সমস্ত ট্রাফিক পুলিশকে দরকার। এ ছাড়া সিভিক পুলিশদের যান নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করা হলেও এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় কাজের কাজ কিছুই হয় না। এরই সঙ্গে রয়েছে সিউড়ি পুরসভার বেহাল রাস্তা। বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যেও সচেতনতার অভাব। অবৈধ দখলদারির জন্য একেই সিউড়ি শহরেরর রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে অবৈধ পার্কিং এবং দখলদারি ঘিরে রাজনৈতিক খবরদারিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাতেই যানজটে নাজেহাল গোটা শহর।

তা হলে উপায়?

পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকাকেই দুষছেন জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। তাঁর কথায়, “জেলায় সত্যিই প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী কম। তার জন্যই ট্রাফিক নিয়ে এই সমস্যা। তবে, সিদ্ধান্ত হয়েছে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সিভিক পুলিশদের এ কাজে লাগানো হবে।” জেলা সদরে স্বয়ংক্রিয় সিগনালিং ব্যবস্থা কেন এত দিনেও চালু করা যায়নি, তা নিয়ে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাসও তিনি দিয়েছেন। অবশ্য রাস্তা ঠিকভাবে সংস্কার না হলে, পাশাপাশি ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে নাগরিকদের মানসিকতা না বদলালে মূল সমস্যা কতটা দূর হবে, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন