টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার রঘুনাথপুর আইটিআইয়ে। —নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের বহিরাগত লোকেরা এসে ছাত্রদের মারধর করে মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে রঘুনাথপুর আইটিআই-র ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবি তুলল এবিভিপি। বৃহস্পতিবার তাদের নেতৃত্বে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ অধ্যক্ষের অফিস চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। পরে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত ও কৌশিক ঘোষ এসে অধ্যক্ষ অভিজিৎ কুণ্ডুর উপস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তারপরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে নির্বাচন বাতিল হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অজয়বাবু। অন্য দিকে, এ দিন রঘুনাথপুর কলেজে ছাত্র সংসদ গঠন করেছে টিএমসিপি। সাধারন সম্পাদক হয়েছেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌমেন তিওয়ারি। ওই কলেজে এবিভিপি সাফল্য পেলেও ২টি আসন বেশি পেয়ে ছাত্র সংসদ ধরে রাখে টিএমসিপি।
রঘুনাথপুর কলেজে ব্যাপক সাফল্যের পরে রঘুনাথপুরের এই শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে উদ্যোগী হয়েছিল এবিভিপি। প্রসঙ্গত টানা চার বছর ধরে আইটিআই-এর ছাত্র সংসদ রয়েছে টিএমসিপির দখলে। আগামী ২৯ জানুয়ারি এই শিক্ষা কেন্দ্রের ৩০টি আসনের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩০টি আসনের জন্য মোট ৩৫টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। টিএমসিপি জানিয়েছে, তারা সমস্ত আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। এবিভিপির অভিযোগ, টিএমসিপির সন্ত্রাসের জন্য মাত্র পাঁচটি আসনের বেশি তারা প্রার্থী দিতে পারেনি।
তাদের আরও অভিযোগ, বুধবার মনোনয়নপত্র তোলার শেষদিনে দুপুরের দিকে তৃণমূলের বহিরাগত দুই কর্মী এসে তাদের কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র কেড়ে ছিঁড়ে দেয়। প্রতিবাদ করায় বিকালে তারা ফিরে এসে চণ্ডী রেওয়ানি নামের তাদের দ্বিতীয় বর্ষের এক সমর্থককে মারধর করে। পরে একজনের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে এবিভিপি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি রঘুনাথপুর কলেজের অস্থায়ী কর্মী এবং তৃণমূল কর্মী হিসাবেই তিনি এলাকায় পরিচিত।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন সকাল থেকেই এবিভিপির নেতৃত্বে প্রায় ৭০-৮০ জন ছাত্র অধ্যক্ষের অফিসের সামনে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি সামলাতে রঘুনাথপুর থানা থেকে পুলিশ আসে আইটিআইতে। এবিভিপির নেতা তথা আইটিআই-এর ছাত্র দ্বীপায়ন মণ্ডলের অভিযোগ, “টিএমসিপি আইটিআইতে কার্যত সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার পরিকল্পনা করেছে। মনোনয়ন তোলার দিনে আমাদের সদস্যদের কাছ থেকে ওরা পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে রেখেছিল। তা সত্ত্বেও আমরা প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করায় বহিরাগতদের আইটিআইতে পাঠিয়ে টিএমসিপি মারধর করিয়েছে।”
তাই এ দিন এবিভিপির সদস্যেরা কলেজে প্রথমে নতুন করে আরও একদিন মনোনয়নপত্র তোলার দিন বাড়ানোর দাবি জানান। দাবি মানা সম্ভব নয় বলে আইটিআই কর্তৃপক্ষ জানানোর পরে তারা নির্বাচন বাতিলের দাবি জানান। দ্বীপায়ন মণ্ডলের দাবি, “আমরা অন্তত ২৫টি আসনে প্রার্থী দিতাম। কিন্তু তৃণমূলের বাধায় সেটা সম্ভব হয়নি। ফলে এই নির্বাচনের কোনও মানেই হয় না। তাই নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছি।” তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে টিএমসিপির পুরুলিয়ার সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রায়ের দাবি, “আইটিআইতে এবিভিপির সংগঠনই নেই। ওরা প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিল করার পরিকল্পনা নিয়েছে।”
এ দিন দুপুরের দিকে আইটিআইতে আসেন দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। রঘুনাথপুর থানার ওসি দীপঙ্কর সরকারকে নিয়ে তাঁরা অধ্যক্ষের অফিসে বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রী ও ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ঝিলিক বাউরিকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ৩০টি আসনের জন্য ৩৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ফলে এই অবস্থায় নতুন করে মনোনয়ন তোলার দিন ধার্য করা বা নির্বাচন বাতিল করা আইনগত ভাবেই সম্ভব নয়। পরে অজয়বাবু বলেন, “নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু দাবি ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছিলেন। ওই দাবি মানা সম্ভব নয় বলে তাঁদের জানানো হয়েছে। ওরা বুঝেছেন।” বহিরাগতরা এনে ছাত্রদের মারধরের অভিযোগের প্রসঙ্গে অজয়বাবু জানান, যাঁর নামে অভিযোগ করেছে এক ছাত্র তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।