মালালার সঙ্গে দুই মলাটে রেখা কালিন্দী

মেয়েদের স্কুলের পড়া বন্ধ করতে চেয়েছিল তালিবান। তা গ্রাহ্য না করে স্কুলে গিয়ে বন্দুকের গুলি খেয়েছিল পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। আর পুরুলিয়ার রেখা কালিন্দীর লড়াই ছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে। স্কুলের পড়া ছাড়তে চায়নি বলে বিয়ে রুখে দিয়েছিল সে। দুই কিশোরীর দেখা হয়নি কখনও। কিন্তু তারা এ বার পাশাপাশি জায়গা পাচ্ছে একটি বইতে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০১:২১
Share:

লেখিকাকে নিজের লড়াইয়ের কথা শোনাচ্ছেন রেখা কালিন্দী। সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

মেয়েদের স্কুলের পড়া বন্ধ করতে চেয়েছিল তালিবান। তা গ্রাহ্য না করে স্কুলে গিয়ে বন্দুকের গুলি খেয়েছিল পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। আর পুরুলিয়ার রেখা কালিন্দীর লড়াই ছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে। স্কুলের পড়া ছাড়তে চায়নি বলে বিয়ে রুখে দিয়েছিল সে।

Advertisement

দুই কিশোরীর দেখা হয়নি কখনও। কিন্তু তারা এ বার পাশাপাশি জায়গা পাচ্ছে একটি বইতে। যারা বদলে দিয়েছে বিশ্বটাকে, তেমন ২০জন শিশুর কথা নিয়ে বই প্রকাশ করছে নেদারল্যান্ডসের একটি প্রকাশনা সংস্থা। “চিলড্রেন হু চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে বইটিতে থাকছে ভারতের একটি শিশু। রেখা কালিন্দী।

সম্প্রতি ঝালদা ২ ব্লকের বড়রোলাই গ্রামে রেখার বাড়িতে এসে তার সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন লেখিকা আলেটা আন্দ্রে। দোভাষীর মাধ্যমে শুনেছেন রেখার গল্প, মোটে ১২ বছরে যার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। শিশুশ্রমিক স্কুলের শিক্ষককে রেখা জানিয়েছিল তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছের কথা। শিশুশ্রমিক স্কুলের শিক্ষক, শ্রম দফতরের আধিকারিকদের পাশে নিয়ে শুরু হয় রেখার লড়াই। বিয়ে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তার বাবা-মা।

Advertisement

এই জেলারই শিশুশ্রম স্কুলের পড়ুয়া আফসানা খাতুন, সুনীতা মাহাতোর মতো অনেকেই নিজেদের বিয়ে রুখে দেন। এই কিশোরীদের ২০১০ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনে ডেকে পাঠিয়ে আলাপ করে তাদের ‘সমাজ পরিবর্তনের দূত’ বলে চিহ্নিত করেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ২০১০ সালে রেখাকে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেই রেখা এখন ঝালদার সত্যভামা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী। আলেটাকে রেখা জানিয়েছে, এখনও বাল্যবিবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে আগের চাইতে কমেছে।

আলেটা জানিয়েছেন, মালালা ইউসুফজাই ছাড়াও তাঁর বইয়ে থাকছে ইয়েমেনের কিশোরী নুজেদ আলির কথা। বয়সে অনেক বড় স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে মহিলা আইনজীবীর সাহায্যে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করে জিতে যায় নুজেদ। নেপালের মেয়ে উর্মিলা চৌধুরী মেয়েদের শিক্ষার জন্য লড়াই করেছিল। সে-ও বইয়ে থাকছে। তানজানিয়া, জাপান, কানাডা, ঘানা, ব্রাজিল, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের খুদে লড়াকুর কথা ওই বইয়ে ছাপা হবে। আগামী ২০ নভেম্বর শিশু অধিকার দিবসে ডাচ ভাষায় প্রকাশিত হবে বইটি।

কী বলছে রেখা? “ওদের সঙ্গে আমার নামও উঠে আসবে শুনে ভাল লাগছে। তবে বাল্যবিবাহ যদি দেশ থেকে উঠে যায়, তবেই সত্যিকারের ভাল লাগবে।” রেখার বাবা কর্ণ কালিন্দীও আলেটাকে বলেছেন, “এখন বুঝতে পারি, মেয়ের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।”

হলকর্ষণ। বিশ্বভারতীর শ্রীনিকেতনে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন