খুনিদের যাবজ্জীবন সাজায় খুশি নিহতের মেয়ে অদিতি সরকার। বোলপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
শান্তিনিকেতনে মহাদেবী বিড়লা গার্লস স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রেণু সরকার (৭৮) খুনে দোষী সাব্যস্ত তিন জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বোলপুর আদালত। সোমবার এই সাজা দেন বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী। শুক্রবারই আদালত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল।
সরকারি আইনজীবী তপনকুমার দে বলেন, “রেণুদেবীকে হত্যার দায়ে নিহতের বাড়ির কেয়ারটেকার উজ্জ্বল তপাদার, এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতী মঙ্গল সাহানি এবং তার সঙ্গী পিন্টু দাসকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৯৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী চুরি করার উদ্দেশ্যে সংঘঠিত এই অপরাধের দায়ে তিন জনেরই আরও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দু’হাজার টাকা জরিমানার (অনাদায়ে আরও ছ’মাস সশ্রম কারাদণ্ড) নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। রেণুদেবীর বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার হওয়ায় বিচারক পিন্টুকে ৪১১ ধারায় আরও দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। সমস্ত সাজাই একযোগে চলবে।”
২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি শান্তিনিকেতনে খুন হন রেণুদেবী। পুলিশ উজ্জ্বল, মঙ্গল এবং পিন্টুকে গ্রেফতার করে। চার্জশিটে পুলিশ দাবি করে, মঙ্গল ও পিন্টু রেণুদেবীর বাড়িতে চুরি করতে ঢুকেছিল। ঘটনায় উজ্জ্বলও জড়িত ছিল। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় রেণুদেবী চিৎকার করেন। তখন মঙ্গল তাঁর মুখে রডের ঘা মারলে বৃদ্ধা লুটিয়ে পড়েন। রেণুদেবীর মোবাইল ফোন আর ব্যাগ হাতড়ে আড়াইশো টাকা বের করে আততায়ীরা পালায়। পরে মঙ্গলই খুনে ব্যবহৃত ওই রডটি পুলিশকে উদ্ধার করে দিয়েছিল।
এ দিন বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ দোষীদের এজলাসে তোলা হয়। বিচারক প্রথমেই দোষীদের নিজেদের বক্তব্য শোনানোর সুযোগ দেন। উজ্জ্বল আর পিন্টু দু’জনেই নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করে সাজা মুকুবের আর্জি জানায়। মঙ্গল অবশ্য অপরাধের কথা স্বীকার করে নেয়। একই সঙ্গে ছেলেমেয়ের দোহাই দিয়ে বিচারকের কাছে সাজা মুকুবের আর্জিও রাখে। তিন জনের ওই বক্তব্য শোনার পরে বিচারক বিকেল ৩টে ৪০ মিনিট নাগাদ সাজা ঘোষণা করেন। এ দিনও মঙ্গল ভাবলেশহীন ছিল। তবে, সাজা ঘোষণার পরেই আদালত কক্ষে ভেঙে পড়ে উজ্জ্বল আর পিন্টু। তাঁরা বিচারকের উদ্দেশে বলতে থাকে, “আমরা নির্দোষ। আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। হুজুর আমাদের সাজা মুকুব করুন। আমাদের পরিবার ভেসে যাবে।” উজ্জ্বল আর পিন্টুর পরিজনেরা দাবি করেন, পুলিশই দু’জনকে ফাঁসিয়েছে।
দোষীদের এই সাজায় সন্তুষ্ট নিহতের ছেলে প্রবাল সরকার এবং মেয়ে অদিতি সরকার। এজলাস থেকে বেরিয়ে তাঁরা বলেন, “মায়ের খুনিদের এই সাজায় আমরা খুশি। দৃষ্টান্তমূলক সাজার কথা ভেবে, অপরাধীরা এমন অপরাধ করার আগে দু’বার ভাববে।”