রেলের স্কুলে বাংলা চেয়ে কনভেনশন

রেলের তিনটি স্কুলের হিন্দি মাধ্যমে আগেই শুরু হয়েছে সিবিএসই পাঠ্যক্রম। রেল কর্তৃপক্ষ সেই সময়েই জানিয়েছিলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা মাধ্যমেও শুরু হবে সিবিএসই। এবং বাংলার পরিবর্তে সেই পাঠ্যক্রম পড়ানো হবে হিন্দি বা ইংরেজিতে। রেলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগেই আন্দোলনে নেমেছিলেন অভিভাবকেরা। এ বার নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে ‘নাগরিক কনভেনশন’ হল আদ্রা রেলশহরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share:

সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

রেলের তিনটি স্কুলের হিন্দি মাধ্যমে আগেই শুরু হয়েছে সিবিএসই পাঠ্যক্রম। রেল কর্তৃপক্ষ সেই সময়েই জানিয়েছিলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা মাধ্যমেও শুরু হবে সিবিএসই। এবং বাংলার পরিবর্তে সেই পাঠ্যক্রম পড়ানো হবে হিন্দি বা ইংরেজিতে। রেলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগেই আন্দোলনে নেমেছিলেন অভিভাবকেরা। এ বার নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে ‘নাগরিক কনভেনশন’ হল আদ্রা রেলশহরে।

Advertisement

রবিবার বিকেলে রেলকর্মী সংগঠন মেন্‌স কংগ্রেসের এক নম্বর শাখা কার্যালয়ের সামনের মাঠে ওই কনভেনশন হয়। ‘বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটি’-র উদ্যোগে আয়োজিত এই কনভেনশনে শুধু পড়ুয়া বা অভিভাবকেরাই নয় সামিল হয়েছিলেন, মেন্‌স কংগ্রেসের আদ্রার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে স্থানীয় সাহিত্যিক, লোক গবেষক ও শিক্ষকেরাও। কনভেনশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রেলের স্কুলগুলি থেকে বাংলা ভাষা তুলে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামবে কমিটি।

রেলবোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রেলের স্কুলগুলিতে সিবিএসই পাঠ্যক্রম শুরু করা হবে। সেই মতো চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আদ্রার তিনটি রেলের স্কুলের হিন্দি বিভাগে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সিবিএসই পাঠ্যক্রমে পড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছে ফর্ম দিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ জানতে চেয়েছিলেন, তাঁরা অন্য মাধ্যমে সিবিএসইতে পড়ুয়াদের পড়াতে রাজি কি না। অধিকাংশ অভিভাবকই তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। অভিযোগ, তার পরেও রেল কর্তৃপক্ষ আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা মাধ্যমেও সিবিএসই পাঠ্যক্রম শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছে। এবং এ ক্ষেত্রে হিন্দি মাধ্যমেই সেই পাঠ্যক্রম পড়ানোর সম্ভবনা প্রবল। ফলে, যে সমস্ত অভিভাবক বাংলা মাধ্যমে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রমে ছেলেমেয়েদের পড়াতে চান, তাঁরা প্রবল আপত্তি তুলেছেন। সিদ্ধার্থ পাল, রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়, তাপস কুণ্ডুদের মতো অভিভাবকদের ক্ষোভ, “তিনটি স্কুলের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত্‌ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কারণ, এত দিন ধরে বাংলা মাধ্যমে পড়ে আসা পড়ুয়াদের পক্ষে হঠাত্‌ করে মাঝপথে হিন্দি বা ইংরেজিতে নতুন সিলেবাসে পড়া সম্ভব নয়।”

Advertisement

রেলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই সম্প্রতি আদ্রায় ‘বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটি’ গড়েছেন অভিভাবকেরা। তাতে সামিল হয়েছেন বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা। রবিবার কনভেনশনে এসেছিলেন আদ্রার প্রবীণ বাসিন্দা তথা সাহিত্যিক বিমলকান্তি ভট্টাচার্য। তিনি রেল কর্তৃপক্ষর সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। একই বক্তব্য শিক্ষক সংগঠনের নেতা তথা রঘুনাথপুরের জিডি ল্যাং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস সরখেল বা রঘুনাথপুরের লোক গবেষক সুভাষ রায় ও সাহিত্যিক শীলা সরকারের। কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা আদ্রার একটি স্কুলের শিক্ষক শম্ভু মান্নার কথায়, “সিবিএসই শুরু করায় আমাদের নীতিগত আপত্তি নেই। কিন্তু, যে কয়েক হাজার পড়ুয়া ইতিমধ্যেই বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করছে, তাদের ভবিষ্যতের কথাও রেল কর্তৃপক্ষকে মাথায় রাখতে হবে।”

রবিবারের কনভেনশনে দাবি উঠেছে, রেলের অধীন দু’টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের একটিতে অন্তত বাংলা মাধ্যমে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাসে পড়ানোর ব্যবস্থা করুক রেল কর্তপক্ষ। অন্যটিতে সিবিএসই পড়ানো হোক। মেন্‌স কংগ্রেসের নেতা সুব্রত দে, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়দের অভিযোগ “এই রাজ্যের মধ্যেই থাকা বিভিন্ন ডিভিশনে রেলের বেশ কিছু স্কুলে বাংলা মাধ্যমে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম পড়ানো হয়। অথচ আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ কার্যত গা-জোয়ারি করে সমস্ত স্কুলেই বাংলা তুলে দিয়ে সিবিএসই চালু করতে চাইছেন। আমরা সংগঠনগত ভাবে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি।” অভিভাবকদের একাংশ সমস্যার কথা জানিয়েছেন পুরুলিয়ার তৃণমূল সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোকে। সাংসদ বলেন, “সিবিএসই বোর্ডের অধিকর্তাকে চিঠি দিয়ে আদ্রায় রেলের একটি স্কুলে বাংলা মাধ্যমে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস পড়ানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়েছি। রেল কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানাচ্ছি।”

তবে রেলের স্কুলগুলির তরফে জানানো হয়েছে, হিন্দি বিভাগে সিবিএসই শুরু করা হলেও বাংলা মাধ্যম নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাদের জানায়নি রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, “রেলের স্কুলগুলিতে সিবিএসই পাঠ্যক্রম শুরু করা রেলের নীতিগত সিদ্ধান্ত। আদ্রায় বাংলা মাধ্যমে এই পাঠ্যক্রম শুরু করতে গিয়ে অভিভাবকরা আপত্তি তুলছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁরা বেশির ভাগই রেলকর্মী নন। ফলে রেল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে রেলকর্মীদের মতামত জানতে চাইছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement