রেশম চাষে সেরা হয়ে পথ দেখাচ্ছেন বধূ

ভোর তিনটের সময় ঘুম থেকে ওঠা। উঠে প্রথমেই হাত লাগাতে হয় রেশমগুটির দেখভালে। তার পরে বসে যেতে হয় রান্নাবান্নায়। সংসারের দায়িত্ব সামলে ফের পড়তে হয় রেশমগুটির পরিচর্যাতেই। সেই কাজ শেষ হতে হতেই রাত ৯টা। রোজকার এটাই রুটিন নলহাটির কল্যাণপুর গ্রামের রেশম চাষি সুমিত্রা সরকারের। দুই সন্তানের জননী, বছর ৩৮-এর ওই বধূই এখন রাজ্যের সেরা মহিলা রেশম চাষি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় রেশম উৎপাদন, অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ সংস্থার থেকে ওই সম্মাননা পাওয়া সুমিত্রাদেবীই এখন রেশম চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন অন্য মেয়েদেরও।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

নলহাটি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০০:৩৭
Share:

রেশম পোকা ও গুটির পরিচর্যায় ব্যস্ত নলহাটি থানার কল্যাণপুর গ্রামের বধূ সুমিত্রা সরকার। ছবি: অনির্বাণ সেন।

ভোর তিনটের সময় ঘুম থেকে ওঠা। উঠে প্রথমেই হাত লাগাতে হয় রেশমগুটির দেখভালে। তার পরে বসে যেতে হয় রান্নাবান্নায়। সংসারের দায়িত্ব সামলে ফের পড়তে হয় রেশমগুটির পরিচর্যাতেই। সেই কাজ শেষ হতে হতেই রাত ৯টা।

Advertisement

রোজকার এটাই রুটিন নলহাটির কল্যাণপুর গ্রামের রেশম চাষি সুমিত্রা সরকারের। দুই সন্তানের জননী, বছর ৩৮-এর ওই বধূই এখন রাজ্যের সেরা মহিলা রেশম চাষি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় রেশম উৎপাদন, অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ সংস্থার থেকে ওই সম্মাননা পাওয়া সুমিত্রাদেবীই এখন রেশম চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন অন্য মেয়েদেরও। রাজ্যের বস্ত্র ও রেশম শিল্প দফতরের জেলা সহ-অধিকর্তা কাবেরী মিত্র বলছেন, “উন্নত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে রেশম চাষে কীভাবে লাভের মুখ দেখা যায়, সুমিত্রাদেবী তা খুব সহজেই করে দেখিয়েছেন। ওঁর থেকে বহু মহিলাই রেশম চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন। ওঁর পরামর্শ নিয়েই এলাকার মহিলারা রেশম চাষ করে আর্থিক উন্নতি ঘটিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।”

গ্রামে পৌঁছে দেখা গেল সুমিত্রাদেবী ২৪ ফুট বাই ১৬ ফুটের একটি ঘরে রেশমগুটির পরিচর্যায় ব্যস্ত। তাঁর স্বামী স্বপন সরকার জানালেন, রেশম চাষ করেই তাঁদের সংসার চলে। ৯০ শতক জমিতে তুঁত পাতা চাষের পুরোটাই তিনি নিজে হাতে করেন। কিন্তু বাদ বাকি সব কাজই করেন তাঁর স্ত্রী। এমনকী, সুমিত্রাদেবীই উৎপন্ন রেশমগুটি বাইরে বিক্রি করতে যান। রেশম চাষের জন্য তিনি সরকারি শিবিরে একমাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সুমিত্রাদেবী বলেন, “শিবিরে শিখেছি কীভাবে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। হাতেকলমে তা প্রয়োগও করেছি। এলাকার অন্য রেশম চাষিরাও আমার কাছে পরিচর্যার পাঠ নিতে আসেন। প্রত্যেককে যথাসাধ্য সাহায্য করি।”

Advertisement

রেশম শিল্প উন্নয়ন দফতরের নলহাটি ২ ব্লকের ভারপ্রাপ্ত সম্প্রসারণ আধিকারিক মিহিরকুমার সিংহ জানান, রেশম চাষে লাভ অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন গুটি পোকা রাখার ঘর ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে শোধন করা, উন্নত প্রজাতির ডিম ব্যবহার করে তাদের খাবার দিয়ে বড় করা, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া-ছত্রাকের হাত থেকে বাঁচাতে সঠিক সময়ে রোগপ্রতিষেধক দেওয়া, নতুন মরশুমে রেশম চাষের গুটিপোকার ডিম পাওয়ার আগে ফের ঘর শোধন করার মতো বিষয়গুলি অত্যন্ত জরুরি। তাঁর কথায়, “এই কাজগুলি যিনি ঠিক ভাবে করতে পারবেন, তিনিই এক জন ভাল রেশম চাষি হতে পারেন। সুমিত্রাদেবী তা উৎকৃষ্ট ভাবে করে দেখিয়ে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে বাকি রেশম চাষিদের পথ দেখাচ্ছেন।” তাঁর কথায় সহমত এলাকার রেশম চাষি কল্যাণী মণ্ডল, মালতি মণ্ডল, অলোক মণ্ডলরাও।

যে মেয়ে বিয়ে পর কোনও দিন বাড়ির বাইরে পা রাখেনি, সে-ই কিন্তু বদলে গিয়েছে রেশম চাষি হয়ে। প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলেন সংসারের সাহায্যে ওই কাজে হাত লাগাবেন। এখন নিজেই স্বাবলম্বী চাষি হয়ে উঠেছেন। সুমিত্রীদেবী বলছেন, “চাষের কাজে এখন একাই ৬ কিলোমিটার দূরের ভদ্রপুরে রেশম শিল্প দফতরে যাই। কখনও আবার ১২ কিমি দূরের লোহাপুরে ব্লক অফিসেও চলে যাই। সেখানে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। প্রথম দিকে অসুবিধা হত। যত দিন গিয়েছে, আমার সাহস তত বেড়েছে।” সব বাধা কাটিয়ে এ ভাবেই শ্রেষ্ঠ মহিলা রেশম চাষি হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গাঁয়ের বধূ সুমিত্রা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন