পুরুলিয়ায় উড়ালপুলেও গরু।—নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ হচ্ছে। ফের লাল, ফের সবুজ। কিন্তু গাড়ি এগোচ্ছে না। সারি সারি আটকে পড়েছে গাড়ি, রিকশা। হর্নের শব্দে কান ঝালাপালা। হলটা কী? পিছনে থাকা এক ব্যক্তি সামনের গাড়ির ভিড় কাটিয়ে এগিয়ে গেলেন। যা দেখলেন, তাতে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! রাস্তাজুড়ে বসে রয়েছে কয়েকটা গরু। তাদের সরাতে পথচারী থেকে আশপাশের ব্যবসায়ীরা তেড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ওরা সরলে তো!
পুরুলিয়া শহরের পথে এমন দৃশ্য হামেশাই দেখা যায়। এমনকী ভরা বাজারে ষাঁড়ে-ষাঁড়ে গুঁতোগুঁতিও লেগে যায়। তখন রাস্তা থেকে পড়িমড়ি করে পথচারীরা দৌড় লাগান। ষাঁড়, গরুর গুঁতোয় অনেকে আহতও হচ্ছেন। শুধু রাস্তাই নয়, গরু-ষাঁড়ের অবাধ বিচরণ উড়ালপুলেও। এও সম্ভব পুরুলিয়ায়। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০ এ জাতীয় সড়কের উড়ালপুলে মাঝে মধ্যেই চলে আসে গরুর পাল। পুলের একপ্রান্ত থেকে উঠে অন্যপ্রান্ত দিয়ে নামার মুখেই গাড়ির চালকের দৃষ্টি আটকে যায় রাস্তার উপরে। পুলের উপরে ইতস্তত বসে রয়েছে একাধিক গরু। গতি নিয়ন্ত্রণ করে এপাশ-ওপাশ কাটিয়ে সাবধানে গাড়ি নিয়ে যেতে হয় চালককে।
হাটের মোড়, উড়ালপুল, পোস্ট অফিস মোড়, কাপড় গলির মোড়, হাসপাতাল মোড়, বাসস্ট্যান্ড মোড়, রথতলা মোড়, মেন রোড, চাইবাসা রোড, রাঁচি রোড, ভবতারণ সরকার রোড-সহ শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও রাস্তায় বেওয়ারিশ গরুর দাপটে অসুবিধায় পড়েছেন বাসিন্দারা। গত শনিবার পুরুলিয়া ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে যুব তৃণমূলের সভাতেও একটি ষাঁড় ঢুকে পড়ে। জনতা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মাইক্রোফোনে জনতাকে সরে গিয়ে ষাঁড়টিকে বেরোনোর পথ করে দিতে বলেন। এক সিপিএম নেতার রসিকতা, “ভাগ্যিস ষাঁড়টা সরে পড়েছিল। না হলে বড় গোলমাল পাকালে হয়তো এর মধ্যেও সিপিএমের চক্রান্ত দেখতে পেতেন তৃণমূল নেতারা।”
শহরবাসীর বক্তব্য, ষাঁড়, গরুগুলো কাদের কেউ জানে না। সকাল থেকে রাত, বিভিন্ন রাস্তার মোড় ও পথ আগলে বসে থাকছে গরু-ষাঁড়। এ ভাবে রাস্তা আটকে বসে থাকার ফলে শুধু পথচারীরাই অসুবিধায় পড়েছে এমন নয়, দুর্ঘটনাও ঘটছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের এক কর্মী মাসখানেক আগে এ জন্য দুর্ঘটনায় কবলে পড়েন। তাঁর কথায়, “রাতে মোটরবাইকে রাঁচি রোড ধরে ফিরছিলাম। রাস্তায় কিছু দূর অন্তর পথবাতির আলো। বাকিটা অন্ধকার। সেখানেই রাস্তার উপরে কয়েকটা ষাঁড় বসেছিল। যখন চোখে পড়ল, তখন আর গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। ষাঁড়ের ধাক্কায় মোটরবাইক নিয়ে ছিটকে পড়ি। মাথায় আঘাত লাগে।”
পুরুলিয়া শহরের চাইবাসা রোডের ব্যবসায়ী ভোলানাথ সেনের কথায়, “কতবার সকালে দোকানের সামনে গরুর পাল বসে থাকায় দোকান খুলতে দেরি হয়েছে।” এই এলাকার আর এক ব্যবসায়ী দেবকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “শহরের রাস্তার অর্ধেক অংশ তো গরু-ষাঁড়ের দখলে চলে গিয়েছে। এটা পুরসভারই দেখা দরকার। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।” জেলা বাসমালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্তর কথায়, “সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে উড়ালপুলের উপরে রাস্তা জুড়ে গরু বসে থাকা। এ জন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে। কোনওদিন এ জন্য বড় দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।”
বাসিন্দারা জানান, কিছু গরুর মালিক নেই। কিছু আবার সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট ডেরায় ফিরে যায়। কিন্তু শহরের রাস্তায় গরু, ষাঁড় ছেড়ে দেওয়ায় পথচারীদের যে সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে গরু মালিকদের ভ্রুক্ষেপ নেই। তাঁদের দাবি, প্রশাসন গরু, ষাঁড় পাকড়ে মোটা জরিমানা করলে তবেই এ সব কমবে।
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তার বেওয়ারিশ গরুর সমস্যা ইদানীং বেড়ে গিয়েছে। তবে আমাদের গরু ধরে অন্যত্র রাখার মতো পরিকাঠামো নেই। গোশালা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”