বেলা বয়ে যায়। মঞ্চে নেতার দেখা নেই। বিজেরি-র সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহকে দেখতে রামপুরহাট হাইস্কুল মাঠে তখন থিক থিক করছে লোক। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁর দেখা না পেয়ে ততক্ষণে হতাশা ছড়াতে শুরু করেছে রোদে ঝলসে যাওয়া মুখগুলোয়।
অনেকে আকাশের দিকে মুখ করে রয়েছেন। কখন নেতার হেলিকপ্টার উড়ে আসবে? রোদের তেজে চোখ ঝলসে যাওয়ার জোগাড়। অনেকের বাড়িতে কাজ ফেলে এসেছিলেন। কারও বা পেটে ততক্ষণে ছুঁচোয় দৌড় শুরু করেছে। তাঁরা গুটি গুটি পায়ে সভা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। সভা পাতলা হতে দেখে মুখ শুকিয়ে গেল কয়েকজন জেলা নেতার।
শেষে লোক ধরে রাখতে মাইক্রোফোন হাতে গলা ছাড়লেন খোদ বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সিনেমা ও যাত্রার একসময়কার নায়ক গান ধরলেন, ‘বহুদূর থেকে এ কথা, দিতে এলাম উপহার’। কয়েকজন উঠতে গিয়েও বসে পড়লেন। মঞ্চে এক বিজেপি মহিলা কর্মীকে নায়িকা সাজিয়ে জয় কিছুক্ষণ অভিনয় করলেন। রোদ উপেক্ষা করে দর্শক সেঁটে গেল সভায়।
বিজেপি সূত্রের খবর, রামপুরহাটে সাড়ে ১১টায় আসার কথা ছিল রাজনাথের। পৌনে ১২টা থেকে সওয়া বারোটা পর্যন্ত তাঁর বক্তব্য রাখার কথা ছিল। সভায় প্রায় ৮০০০ কর্মী ও সমর্থক এসেছিলেন। কিন্তু রাজনাথের দেরি দেখে অনেকে ফিরে যান। তখন মঞ্চে গান শুরু করেন জয়। শেষমেশ দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে রামপুরহাট গাঁধী পার্কে রাজনাথের হেলিকপ্টার এসে নামে। সভায় এসে মাত্র তিন থেকে চার মিনিট বক্তব্য রাখেন রাজনাথ। কিন্তু মঞ্চ থেকে নামলেও তাঁর হেলিকপ্টার তখন ছাড়া যায়নি। জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় হেলিকপ্টার ছাড়তে দেরি করে। সেই সময়টুকু রাজনাথ সভাস্থলের কাছে গাড়িতে জয়কে ডেকে নিয়ে একান্তে কিছুক্ষণ আলোচনা করেন। এ দিনের সভায় জয়ের সঙ্গে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কামিনীমোহন সরকার, দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভনারায়ণ সিংহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন স্থানীয় ইস্যুতে রাজনাথ সিংহ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর বাম রাজ কায়েম করেছে। পরে মানুষ রাজ্যে পরিবর্তন এনেছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজ্যে অনেক গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ। আপনারা আমাদের প্রার্থী যার নাম জয় বিজয় তাঁকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন।” হাসি ছড়ায় জয়ের মুখে। এই বার্তাই তো তিনি রাজনাথের কাছে আশা করেছিলেন।