দাবি মামলাকারী আইনজীবীর

শুধু রান্না বন্ধেই হাল ফিরবে না দ্বারকা নদের

আজ, জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানি। কিন্তু, তার আগে তারাপীঠ নদের দূষণ রোখার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা নেওয়ার বিষয়ে প্রশাসন কোনও দিশা দেখাতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠছে। আপাতত দূষণের জন্য দায়ী হোটেল-লজগুলিতে রান্না বন্ধ করার রাস্তা নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু, বিপন্ন দ্বারকা নদকে বাঁচাতে তা যথেষ্ট নয় বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত।

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায়

তারাপীঠ শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০০:১৯
Share:

আজ, জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানি। কিন্তু, তার আগে তারাপীঠ নদের দূষণ রোখার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা নেওয়ার বিষয়ে প্রশাসন কোনও দিশা দেখাতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠছে। আপাতত দূষণের জন্য দায়ী হোটেল-লজগুলিতে রান্না বন্ধ করার রাস্তা নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু, বিপন্ন দ্বারকা নদকে বাঁচাতে তা যথেষ্ট নয় বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত।

Advertisement

যদিও জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলছেন, “জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো আমরা তারাপীঠের দূষণ সংক্রান্ত বিষয়ে যাবতীয় খোঁজ-খবর নিয়েছি। সেই মতো লজ ও হোটেল মালিকদের নির্দিষ্ট আইন মেনে চলার নির্দেশও দিয়েছি।” প্রায় একই কথা জানিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তবে, তিনি বলেন, “তারাপীঠের ২৯০টি হোটেল-লজ মালিক লিখিত হলফনামা দিয়েছেন। তাতে জানিয়েছেন, তাঁদের হোটেল-লজে শুধু মাত্র থাকার ব্যবস্থা থাকবে। খাওয়াদাওয়া অর্থাৎ রান্নার কোনও ব্যবস্থা থাকবে না।” যদিও হলফনামা মোতাবেক বাস্তব চিত্র খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তিনি জানিয়েছেন।

তারাপীঠ শ্মশান লাগোয়া দ্বারকা নদের জল দূষণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি পরিবেশ আদালত রাজ্য দূষণ মিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্রহীন তারাপীঠের হোটেল-লজ-রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তার জেরে বেশ কিছু দিন ধরে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রের সমস্ত হোটেল-লজ বন্ধ হয়ে যায়। চরম সমস্যায় পড়েন তারাপীঠে আসা পুণ্যার্থীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে শর্ত সাপেক্ষে হোটেল-লজগুলিকে ছাড়পত্র দেয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। হোটেলগুলি থেকে নির্গত দূষণ রুখতে রান্নার ব্যবস্থা রাখার শর্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তারাপীঠে।

Advertisement

কিন্তু, এই ব্যবস্থায় তারাপীঠ নদ কি দূষণ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবে?

প্রশাসনের এই আপদকালীন ব্যবস্থা দ্বারকাকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন জায়দীপবাবু। তিনি বলেছেন, “এটা তো হাস্যকর উদ্যোগ। লজে রান্না করার পাশাপাশি আবাসিকদের ব্যবহৃত নোংরা জল দ্বারকা নদে পড়ে দূষণ ছড়াচ্ছে। দ্বারকাকে সেই দূষণ থেকে মুক্তি দিতে জেলা প্রশাসন সামগ্রিক কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটাই হল মূল প্রশ্ন।” তিনি জানান, তারাপীঠের দূষণ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের এক সমীক্ষক দল আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, ওখানে উপযুক্ত পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন উৎস থেকে বর্জ্য পদার্থ সরাসরি নদীতে মিশে দূষণ ছড়াচ্ছে। দ্বারকাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাঁর আরও দাবি, লজের নোংরা জল ছাড়াও তারাপীঠ মন্দিরে প্রতিদিন ব্যবহৃত ফুল, বেলপাতা প্রভৃতি যাতে দ্বারকা নদে দূষণ তৈরি না করে, সে দিকটিও প্রশাসনের দেখা দরকার। জয়দীপবাবুর বক্তব্য প্রসঙ্গে ‘রামপুরহাট-তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদ’-এর চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পর্ষদের কাজকর্ম পুরোদমে চালু হলে তারাপীঠের লজগুলির বর্জ্য পদার্থ নিকাশির জন্য বিজ্ঞানসম্মত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার জন্য জেলা প্রশাসনকে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে বলে আশিসবাবুর দাবি।

এ দিকে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রামপুরহাটের এক জনসভায় নতুন এই উন্নয়ন পর্ষদকে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশিসবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, বরাদ্দের টাকা এখনও আসেনি। তাঁর আশা, “টাকা পেলে শীঘ্রই গোটা এলাকার উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। পর্ষদের মাধ্যমে তারাপীঠের দূষণ রোধ ও নানা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।” জেলাশাসকের দাবি, দূষণ রুখতে প্রশাসনের সব ব্যাপারেই উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে সব রকমের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে তারাপীঠে হোটেল-লজ-রেস্তোরাঁর সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন