দুর্ভোগের আশঙ্কা

সংস্কার শুরু, বন্ধ অজয় সেতু

সংস্কারের জন্য পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ সংযোগকারী অজয় সেতু। শনিবার বর্ধমান এবং বীরভূমের জেলাশাসক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ১৮ ডিসেম্বর ইলামবাজারের কাছে পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের উপর অজয় নদের ওই সেতুটি ফের যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইলামবাজার ও কাঁকসা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৭
Share:

অজয় সেতু বন্ধের নোটিস দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে। ছবি: বিকাশ মশান।

সংস্কারের জন্য পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ সংযোগকারী অজয় সেতু। শনিবার বর্ধমান এবং বীরভূমের জেলাশাসক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ১৮ ডিসেম্বর ইলামবাজারের কাছে পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের উপর অজয় নদের ওই সেতুটি ফের যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এর জেরে অজয় সেতু ব্যবহারকারী দুই জেলার মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে, পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সমস্ত যানবাহনকে দুবরাজপুর হয়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে যেতে বলা হয়েছে। আবার বোলপুর-বর্ধমান রাস্তাতেও (এনএইচ-২বি হয়ে গুসকরা স্কুলমোড়) গাড়ি যাতায়াত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেক যানবাহন আবার জয়দেব-শিবপুর রাস্তা দিয়েও মুচিপাড়া হয়ে জাতীয় সড়কে আসছে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কটি দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রাস্তা। এই রাস্তার প্রায় ২৩ কিলোমিটার বর্ধমান এবং ২৬ কিলোমিটার বীরভূম জেলার মধ্যে পড়ে। এই রাস্তা দিয়ে দিনভর প্রচুর বাস, লরি যাতায়াত করে। বীরভূম থেকে এই রাস্তা দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের আসানসোল, দুর্গাপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ, মালদহ-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর বাস যাতায়াত করে। বেশ কিছু দিন ধরে পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। গোটা রাস্তাটিই সংস্কার করা হচ্ছে। রাস্তা সংস্কারের সময় যানজট হচ্ছিল। কিন্তু তবুও কোনও রকম ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু বাধ সেধেছে এই রাস্তার উপর থাকা অজয় নদীর সেতুটি। বর্তমানে রাস্তার এই অংশের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, “ইলামবাজারে অজয় সেতুর দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাই আপাতত সেতুর উপর দিয়ে যে কোনও রকমের যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পূর্ত বিভাগের হাইওয়ে ডিভিশন-২ সেতু সংস্কারের কাজ করছেন। ওই সেতুর ওপর নির্ভরশীলদের বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার অজয় সেতু সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।”

উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে রাজ্যের তত্‌কালীন কংগ্রেস সরকার অজয়ের উপর সেতুটি তৈরি করেছিল। ১৯৬২ সালের ১৭ জুন ওই সেতুর উদ্বোধন করেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। পাঁচ দশকেরও বেশি পুরনো ওই সেতুর বর্তমান হাল যথেষ্টই খারাপ হয়ে পড়েছিল। সেতুর উপরে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। এমনকী, সেতুর একাংশ বিপজ্জনক ভাবে ধ্বসেও পড়েছে। গর্তের জেরে বহু যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়েছে। অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। এমন বিপজ্জনক সেতু অবিলম্বে সংস্কারের জন্য বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সেতু সংস্কারে নামলে এ রকম একটি ব্যস্ত রাস্তা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারছিল না প্রশাসন। ফলে দিনের পর দিন বেহাল অবস্থায় বিপর্যস্ত সেতুর উপর দিয়ে যাত্রীদের প্রাণ হাতে করে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছিল। এত দিন পরে প্রশাসন সেতু সংস্কারে হাত দেওয়ায় অসুবিধার মধ্যেও খুশি এলাকাবাসী। ইলামবাজারের খয়েরবুনির মৌসুমী ঘোষ, দেবীপুরের বাণী নায়েকরা বলেন, “ওই সেতু উপর দিয়ে যাতায়াতের সময়ে ভয়ে বুক কাঁপে। প্রাণ হাতে নিয়ে সেতু পারাপার করতে হতো। অথচ স্কুল, কলেজ পড়ুয়া থেকে চাকরিজীবী, নিত্যযাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অজয় সেতুই এক মাত্র ভরসা। সেতু সংস্কার শুরু করে প্রশাসন ভাল কাজে হাত দিয়েছে।”

Advertisement

অবশ্য সেতু সংস্কারের জেরে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পানাগড়-মোরগ্রাম রাস্তার পাশে বসবাসকারী বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে যাতায়াত করার জন্য কোনও যানবাহন মিলছে না। অজয় নদের অন্য পাড়ে, বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জন বিপাকে পড়ছেন। কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সুমন রায়ের ক্ষোভ, “আগাম কোনও বার্তা ছাড়াই হঠাত্‌ করে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনও বিকল্প ব্যবস্থাও করা হয়নি।” এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, বীরভূমের দিক থেকে কোনও গাড়ি এ পাড়ে আসতে পারছে না। বাস চলাচলও বন্ধ। এই রাস্তাটি সংস্কারের আগে দুই জেলার বাসিন্দাদের পরিবহণের কথা প্রশাসনের ভেবে রাখা দরকার ছিল। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনও কর্তাই অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি। তবে, সেখানকার কিছু বাসিন্দা এমনও জানিয়েছেন, পানাগড়-মোরগ্রাম রাস্তাটি সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। আবার অজয় নদের উপর ওই সেতুটিও পারাপারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। তাই সেতু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাও কোনও ভাবে অস্বীকার করা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন