দুর্ঘটনার প্রায় সাড়ে দশ ঘণ্টা পরে মুরারই থানার গোপালপুর এলাকা থেকে আদিবাসী শিশুটি দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটির দেহ রামপুরহাট হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। কিন্তু মৃতদেহ তুলতে পুলিশের কেন এত দেরি হল? এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেন, “দুর্ঘটনায় একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে এই বিষয়টি এলাকায় সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে ওঠে। সেই জন্য এলাকাবাসীকে এবং মৃত শিশুটির পরিবারের লোকজনদের বোঝাতে সময় লেগেছে।” এসডিপিও জানান, ওই ঘটনায় ভ্যান চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার বা আটক হয়নি।
প্রসঙ্গত, অনুমোদনহীন যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশায় কয়লা পাচার করা হচ্ছিল। সোমবার দুপুরে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া মুরারই থানার বড়ুয়া গোপালপুর গ্রামের কাছে রাজগ্রাম-গোপালপুর রাস্তায় দ্রুত গতিতে ছুটে আসা ওই ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় সুরজমণি টুডুর (৪) নামে এক শিশুর। এর পরেই ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা ভ্যান রিকশাটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। একই ভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয় রাস্তা দিয়ে আসা আরও চারটি কয়লাভর্তি অনুমোদনহীন যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশাকেও। তবে মঙ্গলবার ভোর বা সকাল থেকে আর কোন ও বেআইনি কয়লাভর্তি ভ্যান রিকশ ওই রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়নি। কিন্তু সোমবার ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকাবাসী নানা প্রশ্ন তুলেছে? এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনা ঘটেছে দুপুর প্রায় ১টা নাগাদ। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। এলাকায় না এসে রাজগ্রাম পঞ্চায়েত ভবনে মৃত শিশুটির পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে আলোচনা চালিয়ে রাত ১০টার পরে পরিবারের লোকজন শিশুটির দেহ পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়। এটা কোন ধরনের পুলিশের মানবিকতা?
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে এ ভাবে কয়লা পাচার চলছে। কিন্তু পুলিশ এবং প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাঁদের আরও দাবি, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতেই রমরমিয়ে এই বেআইনি কারবার চলছে। সময় থাকতে ব্যবস্থা নিলে একটি নিষ্পাপ শিশুকে এ ভাবে অকালে চলে যেতে হতো না। কয়লা পাচার বন্ধ কত দিন থাকবে তাই নিয়েও এলাকাবাসীর একাংশ প্রশ্ন তুলেছে। একই প্রশ্ন এলাকার এক পুলিশ আধিকারিকেরও। ওই পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “এলাকায় রাজনৈতিক নেতাদের একাংশর প্রত্যক্ষ মদতে এই সমস্ত কয়লা পাচার চলছে। সুতরাং কিছু দিন বন্ধ থাকলেও এলাকার নেতাদের জন্য আবার এই ধরনের অবৈধ ব্যবসা আবার চালু হবে বলে আশঙ্কা।”