পথ-ক্ষতের স্থায়ী উপশম চেয়ে সমীক্ষা

বর্ষা এলেই বেহাল হয়ে যায় রাস্তা। শুরু হয় মেরামতি। দুর্ভোগ বাড়ে পথচারীদের। বাড়ে দুর্ঘটনা। ধূমায়িত হয় অসন্তোষও। প্রায় সাত বছর ধরে সড়ক পরিকাঠামোর উপরে জোর দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০১
Share:

নিজস্ব চিত্র।

বিভিন্ন রাস্তার ক্ষত পথচারীদের দুর্ভোগ তো বাড়াচ্ছেই। ভাঁজ ফেলছে পূর্ত দফতরের কর্তাদের কপালেও।

Advertisement

ফি-বছর একই পরিস্থিতির পুনরাবর্তন রুখতে চিরাচরিত ধ্যানধারণা বদলে এবং নতুন প্রযুক্তি ও চিন্তাভাবনার প্রয়োগে রাস্তা-সমস্যার স্থায়ী বন্দোবস্ত করার কথা ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্য সরকার। কার্যত জ়োন ভাগ করে পরীক্ষানিরীক্ষার এই কাজে এ বার থেকে বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির সহযোগিতা এবং পরামর্শ নেওয়ারও পরিকল্পনা করছে পূর্ত দফতর।

বর্ষা এলেই বেহাল হয়ে যায় রাস্তা। শুরু হয় মেরামতি। দুর্ভোগ বাড়ে পথচারীদের। বাড়ে দুর্ঘটনা। ধূমায়িত হয় অসন্তোষও। প্রায় সাত বছর ধরে সড়ক পরিকাঠামোর উপরে জোর দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু শুধু হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অভিযোগ জানানোর বন্দোবস্ত করলেই যে পরিস্থিতি বদলাবে না, সেটা বুঝছেন প্রশাসনিক কর্তারা। তাই রাস্তার হাল ফেরাতে সরাসরি আসরে নামতে হচ্ছে মুখ্যসচিবকেও।

Advertisement

পূর্ত বিশেষজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, প্রচলিত রীতিতে একটি রাস্তা তৈরি হলে পরবর্তী তিন বছরের জন্য সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্তায় ঠিকাদার সংস্থার উপরে। কিন্তু তার পরেও বচ্ছরকার ক্ষত-চিত্র বদলাচ্ছে না। তাই স্থির হয়েছে, রাস্তা তৈরির উপকরণ, নকশা, পদ্ধতি, প্রযুক্তি-সহ সংশ্লিষ্ট সব কিছুই এমন ভাবে বদলে ফেলা হবে, যাতে সেই সমস্যায় আর পড়তে না-হয়। খাতায়-কলমে না-হলেও পূর্ত দফতরের অধীনে থাকা রাস্তাগুলিকে জ়োন হিসেবে ভাগ করে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হবে। এলাকা-ভিত্তিক আবহাওয়া, মাটির চরিত্র, গাড়ি চলাচলের প্রকৃতি বিবেচনা করে পরীক্ষা চালানো হবে।

স্থায়ী ব্যবস্থাটা কী হবে?

প্রশাসনের এক সড়ক-বিশেষজ্ঞ জানান, অনেক রকম সম্ভাবনার কথা ভাবা হচ্ছে। স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে কংক্রিটের রাস্তা হতে পারে। গাড়ি চলাচল, আবহাওয়া ইত্যাদি সমীক্ষা করে বিটুমিনের মান বেঁধে এবং নকশা স্থির করে কাজ হতে পারে। যেমন যে-সব জেলায় গরম বেশি, সেখানে এখনকার তুলনায় আরও শক্ত বিটুমিন ব্যবহার করা উচিত। আবার রাস্তার প্রাথমিক স্তরে কংক্রিটের ভিত্তি দিয়ে তার উপরে স্টোন ম্যাসটিক অ্যাসফল্ট, গ্যাপ গ্রেডেড অ্যাসফল্ট রবার ব্যবহার করা গেলে রাস্তা উন্নত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। ‘‘ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলির পরামর্শও নেওয়া হবে,’’ বলেন ওই সড়ক-বিশেষজ্ঞ।

তবে প্রশাসনের একাংশের যুক্তি, খরচের কথা মাথায় রেখেই কাজ করা উচিত। ‘‘নকশা, রাস্তা তৈরির পদ্ধতি ঠিক থাকলে বেশি পাথর-বিটুমিনের প্রয়োজন হয় না। কার্যক্ষেত্রে হয়তো দেখা যাবে, বর্তমান খরচেই নতুন পদ্ধতিতে আরও উন্নত মানের রাস্তা তৈরি সম্ভব হচ্ছে,’’ বলেন আইআইটি খড়্গপুরের হাইওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক বিশেষজ্ঞ আধ্যাপক।

‘ওভারলোডিং’-এর সমস্যাও ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। অতীতে ‘ওভারলোডিং’ নিয়ে বারবার সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেও তাতে রাশ টানা সম্ভব হয়নি। এক সড়ক-বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এক-একটি গাড়ির নির্দিষ্ট ওজন ধরে রাস্তা তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট রাস্তা সেই ওজন বহন করতে সক্ষম। ওজন তার বেশি হলে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। তাই এই সমস্যা যতটা সম্ভব এড়ানো উচিত। নইলে কোনও পদক্ষেপই একশো ভাগ সফল হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন