Health

মৃত্যু-শীর্ষে উঃ ২৪ পরগনা, মৃতের দেহের নমুনা সংগ্রহ নয়, উঠল প্রশ্ন

বঙ্গে করোনা সংক্রমণের মানচিত্রে মৃত্যুর হারে এখনও রাশ টানা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ০৩:০৭
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

দিল্লি-কর্নাটকে একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিতর্কের মুখে পিছু হটে ওই দুই রাজ্য। করোনা সন্দেহভাজন মৃতদের নমুনা পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ঘিরে বাংলায় একই পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেল মঙ্গলবার।

Advertisement

বঙ্গে করোনা সংক্রমণের মানচিত্রে মৃত্যুর হারে এখনও রাশ টানা সম্ভব হয়নি। এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যায় কলকাতাকে (১০) ছাপিয়ে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা (১৮)। এতদিন আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি মৃত্যু সূচকেও শীর্ষে ছিল কলকাতা। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে ২১৩৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। সংক্রমণের হার খানিক কমলেও মৃত্যুর ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের।

এরই মধ্যে এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা সন্দেহভাজন মৃতদেহের নমুনা পরীক্ষা সংক্রান্ত নতুন বিধি ঘোষণা করে বলেন, ‘‘কাউকে হয়তো মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। করোনা সন্দেহভাজন হলেও তাঁকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। মৃত্যুর পরে তাঁর টেস্ট করার ব্যাপারটা থাকছে না। মৃত্যুর আগে সন্দেহভাজন থাকলেও মৃতদেহ বাড়ির লোকে পাবে। কোভিড রোগীদের যে সিস্টেম মেনে দেহ দেওয়া হয়, সেই সিস্টেমে দেওয়া হবে।’’

Advertisement

গত ১৮ মে একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দিল্লি সরকার। এর সপ্তাহ তিনেক পরে একই রকম নির্দেশ জারি করে কর্নাটকের সরকার। দু’ক্ষেত্রেই মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ছিল, কোভিডের ক্ষেত্রে মেডিকো-লিগ্যাল অটোপসি’র জন্য আইসিএমআর যে নির্দেশিকা জারি করেছে তাতে স্পষ্ট ভাবে কোভিড সন্দেহভাজনদের দেহ মর্গে পাঠানোর আগে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হল, কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য সন্দেহভাজনের করোনা রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া, নমুনা পরীক্ষা না করে করোনা সন্দেহভাজনের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিলে, সেই রোগীর মৃত্যুকে কী ভাবে দেখা হবে? সংক্রমণের গতিবিধি বুঝতে করোনার কারণে রাজ্যে কত জনের মৃত্যু হয়েছে, সেটাও নির্দিষ্ট ভাবে জানা জরুরি।

অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আইসিডি ১০ কোড অনুযায়ী করোনা সন্দেহভাজন মৃত্যুকে কোভিড মৃত্যু হিসাবেই ধরতে হবে। সে দিক থেকে রাজ্য সরকার এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সব মৃত্যু কি কোভিড-মৃত্যু বলে ধরা হবে? সন্দেহভাজনের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ কী হবে? তাঁদের নিয়ম মেনে কি কোয়রান্টিনে পাঠানো, নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা ভুললেও চলবে না, সন্দেহভাজন নেগেটিভ হলে তাঁর পরিজনেরা স্বাভাবিক রীতিনীতি মেনে দেহ সৎকারের সুযোগ পেতেন। সর্বোপরি সন্দেহভাজন যে নেগেটিভ এটা স্পষ্ট না হলে পরিজনেরা প্রতিবেশীদের অনভিপ্রেত আচরণের শিকার হতে পারেন। রাজ্য সরকারের সেটাও ভাবা উচিত।’’

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন