— প্রতীকী চিত্র।
প্রায় দেড় বছর ধরে কোনও বিচারক নেই। ফলে, কোনও মামলারই শুনানি হচ্ছে না। যার জেরে আতান্তরে পড়েছেন মামলাকারীরা। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের তিন নম্বর বেঞ্চের এই দুরবস্থা কবে ঘুচবে, জানা নেই কারও। প্রায় দেড় হাজার মামলা ঝুলে রয়েছে সেখানে। দূর-দূরান্তের বহু মানুষ মির্জা গালিব স্ট্রিটের খাদ্য ভবনে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। একই দুর্দশার ছবি কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনেও।
সাধারণ মানুষ যে কোনও সামগ্রী বা সম্পত্তি কিনতে গিয়ে প্রতারিত হলে অথবা চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাফিলতি হয়েছে বলে মনে করলে ক্ষতিপূরণের জন্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করতে পারেন। প্রতিটি জেলায় রয়েছে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন। ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের আবেদন করা যায় জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে। ৫০ লক্ষ থেকে দু’কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের আবেদন করা যায় রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে। আর দু’কোটি টাকারও বেশি ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে গেলে দিল্লির ন্যাশনাল কমিশনের দ্বারস্থ হতে হবে।
কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিটে খাদ্য ভবনের ঠিকানায় তিনটি কমিশন রয়েছে। অভিযোগ, ওই তিনটি কমিশনের তিন নম্বর বেঞ্চে গত প্রায় দেড় বছর ধরে কোনও বিচারক নেই। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের এক নম্বর বেঞ্চেও দীর্ঘ দিন বিচারক না থাকায় একই রকম বিপাকে পড়েছিলেন মামলাকারীরা। সম্প্রতি সেখানে বিচারক নিযুক্ত হওয়ায় সমস্যা কিছুটা দূর হয়েছে। কিন্তু তিন নম্বর বেঞ্চ দীর্ঘ দিন ধরেই অচল। সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। হুগলির বাসিন্দা এক মামলাকারীর অভিযোগ, ‘‘দূর থেকে এসেছি। বিচারক না থাকায় মামলার তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। কবে শুনানি শুরু, অন্ধকারে সবাই।’’
কলকাতা জেলায় চারটি ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন বা আদালত রয়েছে। এক ও দু’নম্বর বেঞ্চ বসে নিউ মার্কেটের নেলি সেনগুপ্ত সরণির একটি ভবনের চার ও সাততলায়। দফতর সূত্রের খবর, চারতলায় কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে বিচারক সপ্তাহে পাঁচ দিনের মধ্যে মাত্র দু’দিন বসেন। সেখানকার এক কর্মীর কথায়, ‘‘এক নম্বর কমিশনে বিচারক আসেন সোম ও শুক্রবার। মাঝের তিন দিন বসেন শিয়ালদহের চার নম্বর কমিশনে। ফলে, দু’দিক সামলাতে গিয়ে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। বহু মামলা ঝুলে রয়েছে। শুনানির তারিখ ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে। রায় ঘোষণার দিনও পিছিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে মামলাকারীদের নাজেহাল অবস্থা।’’
ওই ভবনের সাততলায় কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের দু’নম্বর বেঞ্চেরও একই দশা। দফতরের এক কর্মী জানান, সেখানেও বিচারপতি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন বসেন। বাকি তিন দিন যান রাজারহাটে। ফলে, সেখানেও প্রচুর মামলা ঝুলে রয়েছে। সাধারণ মানুষ নিত্যদিন এসে ফিরে যাচ্ছেন। শিয়ালদহের চার নম্বর কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনেও একই ছবি। অর্থাৎ, প্রত্যেক বিচারককে দু’জায়গা সামলাতে হচ্ছে। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, পর্যাপ্ত বিচারকের অভাবে রাজ্যের বিভিন্ন ক্রেতা সুরক্ষা কমিশন কার্যত ধুঁকছে।
কনজিউমার্স কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিরণ্ময় ব্রহ্মচারীর অভিযোগ, ‘‘একাধিক কমিশনে বিচারক নেই। হাজার হাজার মামলা ঝুলে রয়েছে। শুনানি ঠিক মতো হচ্ছে না। শুনানির দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। বিচারক নিয়োগের জন্য ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রীর দফতরে একাধিক বার চিঠি দিয়েছি। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।’’ এ বিষয়ে জানতে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রকে একাধিক বার ফোন করা হলেও সেটি বেজে গিয়েছে। মেসেজ করা হলেও উত্তর দেননি।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে