সারদায় নাম জড়িয়ে রাজ্য কমিটিতে প্রশ্নের মুখে রবীন

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছিল। তার জেরে এ বার দলের মধ্যেই প্রবল প্রশ্নের মুখে পড়তে হল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবকে। একটি টিভি চ্যানেল সারদা গোষ্ঠীর কাছে বিক্রির ব্যাপারে রবীনবাবু মধ্যস্থতা করেছিলেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই ব্যাপারে তিনি দলকে কিছু জানিয়েছিলেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছিল। তার জেরে এ বার দলের মধ্যেই প্রবল প্রশ্নের মুখে পড়তে হল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবকে। একটি টিভি চ্যানেল সারদা গোষ্ঠীর কাছে বিক্রির ব্যাপারে রবীনবাবু মধ্যস্থতা করেছিলেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই ব্যাপারে তিনি দলকে কিছু জানিয়েছিলেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য।

Advertisement

আলিমুদ্দিনে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। প্রথম দিনেই সেখানে দলীয় সতীর্থদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন রবীনবাবু। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা সম্পাদক এবং আরও কয়েক জন রাজ্য কমিটির সদস্য এ দিন বৈঠকে বলেছেন, সারদা-কাণ্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের প্রতিটি গণসংগঠন যখন পথে নেমেছে, সেই সময়ে রবীনবাবুর নাম তদন্তে জড়িয়ে যাওয়ায় দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে। বাম কর্মী-সমর্থকদের মনোবলেও এর ফলে ধাক্কা লেগেছে। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা সম্পাদক আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, কোনও অভিযোগে নাম জড়ালে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত পদ থেকে সরে দাঁড়ানোই নৈতিক ভাবে ঠিক পদক্ষেপ। যাঁরা জনমানসে কাজ করছেন, তাঁদের এই রীতিই মেনে চলা উচিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পদক্ষেপ করছেন না বলেই সমালোচনা হচ্ছে। ওই নেতার বক্তব্যে ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, তদন্তে নিরপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে রবীনবাবুর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাই বুঝিয়েছেন তিনি।

দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হওয়ায় সাংগঠনিক রীতি হিসাবে রবীনবাবু অবশ্য রাজ্য কমিটির বৈঠকে বক্তা নন। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার বৈঠকের শেষ দিনে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয় কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীকে তিনি অবশ্য ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, টিভি চ্যানেল বিক্রিতে মধ্যস্থতা বা সেই সংক্রান্ত কোনও আর্থিক লেনদেনে তাঁর কোনও ভূমিকা ছিল না।

Advertisement

সারদা-কাণ্ডে বামফ্রন্টের মনোবলে যাতে আঁচড় না লাগে, সেই লক্ষ্যে সোমবারই অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারণার প্রতিবাদে বামেদের মিছিলে রাখা হয়েছিল রবীনবাবুকে। মাইক হাতে তাঁকে সঞ্চালকের ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তার পর দিনই দলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে তাঁকে নিয়ে। রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্যের বক্তব্য মূলত দু’টি বিষয়ে। প্রথমত, দলের প্রথম সারির পরিচিত মুখ হয়েও এমন ধরনের কর্মকাণ্ডে কেউ নিজেকে জড়াবেন কেন, যাতে প্রশ্ন উঠতে পারে? এ ব্যাপারে দলকে তিনি আদৌ আবহিত করেছিলেন কি? এবং দ্বিতীয়ত, যিনি নির্দোষ, সিবিআইয়ের ডাক পাওয়ার পরে তিনি তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে সময় চাইবেন কেন? কেন দলকে হস্তক্ষেপ করে তাঁকে দ্রুত সিবিআইয়ের কাছে পাঠাতে হবে?

এই বিতর্কের আগে বৈঠকের শুরুতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, আগামী বছর মার্চের প্রথমার্ধেই রাজ্য সম্মেলন হবে কলকাতায়। লোকাল কমিটি স্তরের সম্মেলন-পর্ব শুরু হবে ১৫ অক্টোবর থেকে। তবে এর আগের বৈঠকে দেড় ঘণ্টার প্রারম্ভিক ভাষণ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। সেই অভিমানেই হয়তো এ দিন দেড় মিনিটেই প্রারম্ভিক বক্তৃতা শেষ করে দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক! তা নিয়েও বৈঠকে এ দিন খোঁচা দিতে ছাড়েননি কেউ কেউ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন