রেডিয়োলজিস্টের আকাল, সঙ্কটে রোগী-পরিষেবা

মাসখানেক আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে রোগীদের এমআরআই, সিটি স্ক্যান-সহ ব্যয়বহুল পরিষেবা দেওয়া হবে নিখরচায়।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪১
Share:

এনআরএস-সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজে রোগীর তুলনায় রেডিয়োলজি বিভাগে চিকিৎসক কার্যত হাতে গোনা। ছবি: সংগৃহীত।

কেউ দিনে সাড়ে তিনশো এক্স-রে রিপোর্টে কোনও রকমে সই করে ছাড়ছেন। কেউ আবার হিমশিম খাচ্ছেন শ’খানেক সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পড়ে দেখতে। চিকিৎসক-সঙ্কটের জেরে এমনই নাভিশ্বাস অবস্থা সরকারি হাসপাতালের রেডিয়োলজি বিভাগে। যার জেরে ব্যাহত হচ্ছে রোগী পরিষেবা।

Advertisement

মাসখানেক আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে রোগীদের এমআরআই, সিটি স্ক্যান-সহ ব্যয়বহুল পরিষেবা দেওয়া হবে নিখরচায়। কিন্তু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এনআরএস-সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজে রোগীর তুলনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিকিৎসক কার্যত হাতে গোনা। তাই রোগীর চাপ সামলাতে প্রাণান্তকর অবস্থা হচ্ছে তাঁদের।

মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র নিয়মানুযায়ী, শহরের পাঁচটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেডিয়োলজি বিভাগে ১ জন প্রফেসর, ৩ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং ৮ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট থাকা আবশ্যিক। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এনআরএসে ৩ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ১ জন প্রফেসর রয়েছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মাত্র ১ জন! ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ১ জন প্রফেসর, ৩ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ১ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট আছেন। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রয়েছেন ৪ জন, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ২ জন। আবার এসএসকেএমে দু’জন প্রফেসর, তিন জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও এক জন সিনিয়র রেসিডেন্ট রয়েছেন।

Advertisement

এমসিআইয়ের আরও নিয়ম, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের রেডিয়োলজি বিভাগে এমডি পাশ করা সিনিয়র রেসিডেন্ট থাকতেই হবে। কিন্তু, অধিকাংশ হাসপাতালে ওই পদ খালি। স্বাস্থ্যকর্তারাই জানাচ্ছেন, কলকাতার যে কোনও মেডিক্যাল কলেজে এমসিআই পরিদর্শনে এলে রেডিয়োলজি বিভাগে পড়ানোর ছা়ড়পত্রই বাতিল হয়ে যাবে! তার উপরে রাজ্যে পাঁচটি নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। সেখানে এমসিআইয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য চিকিৎসক বদলি করা হচ্ছে কলকাতার হাসপাতালগুলি থেকে। ফলে, আরও বাড়ছে সঙ্কট।

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিখরচায় ঠিক মতো পরিষেবা দেওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে রোগী-চিকিৎসক অনুপাতের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। অথচ, সেই দিকটিই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হচ্ছে। শেষ কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, রেডিয়োলজিতে এমডি এমন চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালে যোগ দিতে চাইছেন না। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে কাজের চাপ তুলনায় কম। বেতনও বেশি। এনআরএসের রেডিয়োলজি বিভাগের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘সরকারি রেডিয়োলজিস্টের তুলনায় যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালের রেডিয়োলজিস্ট অন্তত দেড় গুণ বেশি বেতন পান। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারি হাসপাতালে যোগ দিতে নতুন চিকিৎসকদের অনীহা থাকছে।’’

সম্প্রতি রোগীর শারীরিক পরীক্ষা বিনামূল্যে হওয়ার সিদ্ধান্তের জেরে সরকারি হাসপাতালে কাজের চাপ বে়ড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে বলা হয়েছে, সাত দিনে রিপোর্ট দিতেই হবে। সম্প্রতি কয়েক জন সরকারি রেডিয়োলজিস্ট বেসরকারি হাসপাতালে চলে গিয়েছেন। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কাজ বেশি, বেতন কম। তাই অনেকেই ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। রোগীদের পরিষেবা দেওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

স্বাস্থ্য ভবনও মানছে, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন করা সহজ নয়। ফলে দ্রুত বেতন-সমস্যা মেটানো মুশকিল। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি-বেসরকারি বেতন বৈষম্যের নিষ্পত্তি দ্রুত সম্ভব নয়। অনেক শূন্য পদ রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চিকিৎসক সঙ্কট সম্পূর্ণ না মিটলেও রোগী পরিষেবায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সে দিকে নজর রাখা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন