অভ্যর্থনায় কাজ নেই, কাজ করুন

পরপর দুর্ঘটনায় রেলের গাফিলতি সামনে এসে পড়ায় এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, রেলে কর্মসংস্কৃতির মান নেমে গিয়েছে। ওই কর্মসংস্কৃতিকে আবার চাঙ্গা করতেই কিছু নতুন ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন লোহানি।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

অশ্বিনী লোহানি।

অকারণ বাহুল্য বোধেই ঊর্ধ্বতন আধিকারিক বা রেলকর্তাদের সৌজন্য দেখানোর জন্য ‘বোকে কালচার’ (পুষ্পস্তবকের সংস্কৃতি) বন্ধ করতে বলেছিলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। বলেছিলেন, ‘‘ফুল নয়, গাছের চারা দিন। পরিবেশ বাঁচবে।’’

Advertisement

এক ধাপ এগিয়ে রেল বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি রেলকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কেউ এলে তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য উঁচু তলার কারও আসার প্রয়োজন নেই। তাঁর কথায়, ‘‘ঊর্ধ্বতন অফিসারকে স্বাগত জানানোর জন্য স্টেশনমাস্টারই যথেষ্ট। অন্যদের এসে সময় নষ্ট করতে হবে না। বরং ওই সময়ে তাঁরা যেন নিজের কাজ করেন।’’ আসলে তিনি যে অনাবশ্যক ‘প্রোটোকল’ মানেন না, রেলকর্মীদের কাছে সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন লোহানি।

পরপর দুর্ঘটনায় রেলের গাফিলতি সামনে এসে পড়ায় এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, রেলে কর্মসংস্কৃতির মান নেমে গিয়েছে। ওই কর্মসংস্কৃতিকে আবার চাঙ্গা করতেই কিছু নতুন ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন লোহানি।

Advertisement

বিশেষ করে নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। নতুন পদে যোগ দিয়েই রেলের উত্তর জোনে গ্যাংম্যান, কি-ম্যানের মতো চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন নতুন বোর্ড চেয়ারম্যান।

কর্মসংস্কৃতি পরিবর্তন আনতে গিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যানের একটি প্রশ্নই নাড়িয়ে দিয়েছে সব ক’টি রেল জোনের কর্তাদের। তিনি ইতিমধ্যেই সব জোনের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে জানতে চেয়েছেন, এখনও কী করে অফিসারদের বাড়িতে নিজেদের কাজের জন্য গ্যাংম্যানদের (গ্রুপ-ডি) ব্যবহার করা হচ্ছে?

রেলকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর নয়, অনেক অফিসারের বাড়িতেও গ্যাংম্যানের মতো কর্মীদের দিয়ে সংসারের কাজ করানো হচ্ছে। বিভিন্ন রেলকর্তার বাড়ির সামনে যে-সব সুদৃশ্য ফুলের বাগান দেখা যায়, সেগুলোর পিছনে আর কেউ নন, রয়েছেন রেলের গ্যাংম্যানেরাই।

রেলের কাজকর্মে অগ্রাধিকারের তালিকায় যাত্রী-সুরক্ষার স্থানই যে শীর্ষে, বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে কয়েক দফার আলোচনায় সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন লোহানি। রেলের সুরক্ষা বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন না-করলে কাউকেই যাতে রেয়াত করা না-হয়, সেই নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রেলের

প্রতিটি জোনে ‘সেফটি অডিট’ চালু করতে বলেছেন লোহানি। রেল সূত্রের খবর, এই বিষয়টি অনেক আগে চালু ছিল রেলে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেটা বন্ধ আছে। কী ভাবে করা হয় ওই অডিট? রেলকর্তারা জানান, এক জোনের সেফটি অফিসারেরা অন্য জোনে গিয়ে দেখেন, সেখানে সুরক্ষা বিধি কতটা পালিত হচ্ছে। তার পরে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয় বোর্ড। অভিযোগ, ইদানীং বিভিন্ন জোনে রেলকর্তারা অধস্তন কর্মীদের কথায় কর্ণপাত করছেন না। তাঁদের ব্যবহার খারাপ হওয়ায় নিচু তলার কর্মীরা তাঁদের কাছে যেতে সাহস পান না। এই বিষয়টি লোহানির নজর এড়ায়নি। তাই তিনি অফিসারদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ময়দানে নেমে কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে অধস্তনদের অসুবিধার কথাও শুনতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন