মৃত কিশোর উমেশ মুন্ডা। নিজস্ব চিত্র।
বাবাকে খাবার দিতে যাওয়ার পথে চিতাবাঘের আক্রমণে প্রাণ গেল দশ বছরের কিশোরের। ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির কালচিনি ব্লকের রাজাভাত চা বাগানের মধ্যেই।
অন্যদিনের মতো আজও বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাবাকে খাবার দিতে যাচ্ছিল বছর দশেকের উমেশ মু্ন্ডা। সঙ্গে ছিল তার সমবয়সী দুই বন্ধু মুকে মুন্ডা এবং লাল ওরাঁও। তারাও তাদের বাবার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। রাজাভাত চা বাগানের ১৪ নম্বর সেকশন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তারা। বাকি দুই বন্ধুর থেকে সামান্য একটু এগিয়ে গিয়েছিল উমেশ। ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি ওত পেতে আছে হিংস্র চিতাবাঘ।
ওরা তখন চা বাগান ম্যানেজারের বাংলো থেকে ৫০ থেকে ৬০ মিটার দূরে। সেই সময় হঠাৎই চিতাবাঘটি এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে উমেশের উপর। উমেশের টুটি চেপে ধরে টানতে টানতে ঝোপের মধ্যে নিয়ে চলে যায়। চোখের সামনে এই ঘটনা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মুকে এবং লাল। নিজেকে বাঁচাতে পাশের একটি নালার মধ্যে ঝাঁপ দেয় লাল। আর মুকে লুকিয়ে পড়েছিল চা গাছের ঝোপের আড়ালে।
আরও পড়ুন: মশা আটকানোর ‘জালে’ পড়ছে মাছ
কিছু ক্ষণ পর একটু ধাতস্থ হয়েই প্রাণ বাঁচাতে বাড়ির দিকে ছুট লাগায় দুই কিশোর। খবর দেয় পাড়ায়। উমেশ মুন্ডার বাড়িতেও খবর পৌঁছয়। সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় রাজাভাত চা বাগানে। বন দফতরের কর্মীরা এবং কালচিনি থানার পুলিশ এসে উমেশের ছিন্ন ভিন্ন দেহ উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই এলাকাতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাগান শ্রমিকদের ক্ষোভ, বন দফতরের কর্মীরা চিতাবাঘ ধরে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসে। কিন্তু প্রতি বারই চিতাবাঘ লোকালয়ে ফিরে আসে আবার। চা বাগান কর্তৃপক্ষও জাল লাগানোর কোনও ব্যব্স্থা নেয় না। রাজাভাত চা বাগানের ম্যানেজার রামকুমার ঘাটোয়াও জানিয়েছেন, এ বছরের জানুয়ারি মাসে আরও দু’বার চিতাবাঘের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সেই দু’বার শ্রমিকদের থাবা মেরে জখম করেই ক্ষান্ত হয়েছিল চিতাবাঘ। এ বারের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি।