সীমান্তে রাজনীতি করছে শাসকদল, সরব রাজনাথ

সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রুখতে কেন্দ্রের নতুন ভাবনার কথাও জানান রাজনাথ৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৩
Share:

মঞ্চে: মাথাভাঙায় রাজনাথ সিংহ। নিজস্ব চিত্র

কোচবিহার জেলায় দীর্ঘ বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সেখানে জনসভা করতে এসে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানের প্রসঙ্গ সরব হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এই দুই বিষয়েই তিনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুললেন।

Advertisement

শনিবার রাজনাথ অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবাধে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান চলছে, যা বন্ধে কেন্দ্রকে কোনও মদতই করছে না তৃণমূল সরকার। উল্টে অবৈধ অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি৷ তাঁর আরও দাবি, তৃণমূল সরকার জমি না দেওয়াতেই এ রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তের অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ আটকে রয়েছে। সীমান্ত এলাকা পুরোপুরি বন্ধে (সিল) এ দিন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করার কথাও বলেছেন তিনি।

গত ডিসেম্বর মাসে এই কোচবিহার থেকেই রথযাত্রা বের করার কথা ছিল বিজেপির৷ সেই উপলক্ষে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে এনে একটি জনসভা করারও পরিকল্পনা ছিল তাদের৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যায়৷ ওই ঘটনার প্রায় দু’মাসের মাথায় শনিবার রাজনাথ সিংহের উপস্থিতিতে কোচবিহারের মাথাভাঙার পাড়াডুবিতে জনসভা করে বিজেপি। একই সঙ্গে পাশের জেলা আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটাতেও এ দিন একটি জনসভা করে তারা।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুর
সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ২৫২ কিলোমিটার
কাঁটাতার নেই: ২৯ কিলোমিটার
কোথায় নেই কাঁটাতার: হিলিতে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ মিটার দূরত্বের পর কাঁটাতারের বেড়া বসাতে হবে। কিন্তু হিলিতে বেশ কিছু এলাকায় দেড়শো মিটারের মধ্যে জনবসতি থাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি।

মালদহ
সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ১৭৯ কিলোমিটার
কাঁটাতার নেই: ৪০ কিলোমিটার
কোথায় নেই কাঁটাতার: গঙ্গা, পাগলা, টাঙন, পুনর্ভবা, মরা টাঙন প্রভৃতি নদী যে এলাকাগুলিতে রয়েছে সেখানে বেড়া নেই। কালিয়াচক ৩ ব্লকের চরি অনন্তপুর, গোলাপগঞ্জ পঞ্চায়েত, পুরাতন মালদহ ব্লকের মুচিয়া পঞ্চায়েত, ইংরেজবাজার ব্লকের মহদিপুর, হবিবপুর ব্লকের আইহো ও শ্রীরামপুর এবং বামনগোলা ব্লকের কয়েকটি গ্রামে জমিজট থাকায় কাঁটাতারের বেড়া হয়নি।

দার্জিলিং
সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ২১ কিলোমিটার
কাঁটাতার নেই: ৩ কিলোমিটার
কোথায় নেই কাঁটাতার: ফাঁসিদেওয়ার ধনিয়া মোড় থেকে বন্দরগছ পর্যন্ত মহানন্দা নদীই দু-দেশকে
ভাগ করেছে। সেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই।

কোচবিহার
সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ৫৪৯ কিলোমিটার
কাঁটাতার নেই: অন্তত ১০০ কিলোমিটার
কোথায় নেই কাঁটাতার: নাজিরহাট, গীতালদহ, উশশারহাট, শীতলখুচি, সিতাই, বালাভূত, মেখলিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায়। রয়েছে নদী-সীমান্তও।

উত্তর দিনাজপুর
সীমান্তের দৈর্ঘ্য: ২২৭ কিলোমিটার
কাঁটাতার নেই: ১.৬ কিলোমিটার
কোথায় নেই কাঁটাতার: চোপড়া

আলিপুরদুয়ার জেলায় বাংলাদেশ সীমান্ত না থাকলেও, ফালাকাটার প্রথম জনসভা থেকেই অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান নিয়ে সরব হন রাজনাথ। পরে মাথাভাঙার পারাডুবিতে গিয়েও এই নিয়ে সুর চড়ান তিনি। তাঁর অভিযোগ করেন, “যে ভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ চলছে, তা কি ঠেকানো যায় না? সে জন্য আমরাও চাই বাংলাদেশ সীমান্তের গোটাটাই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মুড়ে দিতে৷ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানের ঘটনা রুখতে তৃণমূলের সরকারেরও উচিত কেন্দ্রকে সাহায্য করা৷ কিন্তু তৃণমূল সরকার উল্টে বিষয়টিতে প্রশ্রয় দিচ্ছে৷”

রাজনাথ দাবি করেন, বাংলাদেশ সীমান্তের সর্বত্র কাটাতারের বেড়া দিতে বছরের পর বছর ধরে রাজ্যের কাছ জমি চাওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু রাজ্য সরকারের সে ভাবে সহযোগিতা করছে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, “অথচ, পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ক্রমশ খারাপ দিকে যাচ্ছে৷”

সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রুখতে কেন্দ্রের নতুন ভাবনার কথাও জানান রাজনাথ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ইজ়রায়েলে গিয়ে দেখেছি, সেখানকার সীমান্ত এলাকা সিল করতে নয়া প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। তার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরাও ‘কমপ্রিহেন্সিভ ইনটিগ্রেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের’ মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের বাংলাদেশ সীমান্ত পুরোপুরি সিল করে দেব৷ যাতে অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়৷” তাঁর কথায়, এই ব্যবস্থা চালু হলে চোরাচালান, গরুপাচার ও জাল নোটের কারবারও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

রাজনাথের এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন দুই জেলার তৃণমূল নেতারা। কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিজেপির সভা নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। রাজনাথ সিংহ কিছু ভুল তথ্য পরিবেশন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তাতে কোনও লাভ হয়নি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement