আজ ঝাড়গ্রামে কৃষকসভার সমাবেশে সূর্য

আর অপেক্ষা নয়, এবার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির তালিকা নিয়ে মাঠে নেমে শাসক দলকে স্রেফ সাঁড়াশি আক্রমণ। বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধারে আপাতত এই লক্ষ্যেই হাঁটছে সিপিএম। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর এই তিন জেলার বনাঞ্চল এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য আজ, সোমবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্ক লাগোয়া এলাকায় এক জনসমাবেশে হাজির থাকবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বিধানসভার বিরোধী দল নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০১:০৯
Share:

অতিথিশালায় সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

আর অপেক্ষা নয়, এবার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির তালিকা নিয়ে মাঠে নেমে শাসক দলকে স্রেফ সাঁড়াশি আক্রমণ। বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধারে আপাতত এই লক্ষ্যেই হাঁটছে সিপিএম। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর এই তিন জেলার বনাঞ্চল এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য আজ, সোমবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্ক লাগোয়া এলাকায় এক জনসমাবেশে হাজির থাকবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বিধানসভার বিরোধী দল নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলে এটিই সূর্যবাবুর প্রথম রাজনৈতিক জনসভা।

Advertisement

দলের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষকসভার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির উদ্যোগে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। সমাবেশের আগে এ দিন সকাল দশটায় অরণ্যশহরের বলাকা মঞ্চে কৃষকসভার পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত একটি কনভেশনেও হাজির থাকবেন সূর্যবাবু। কনভেনশনের পরে বিকেলে জনসভা করবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। ঝাড়গ্রামে সূর্যবাবু এর আগে শেষবারের মতো জনসভা করেছিলেন লোকসভা ভোটের প্রচারে গত বছর এপ্রিলে।

পুরুলিয়ায় দলীয় কর্মসূচি সেরে রবিবার রাত আটটা নাগাদ ঝাড়গ্রাম শহরে আসেন সূর্যবাবু। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারবার দাবি করেন, জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। কিন্তু উনি যখন এখানে আসেন, তখন নিরাপত্তার কোনও খামতি থাকে না। এমনকী আমিও পুরুলিয়া থেকে আসার পথে দেখলাম, জঙ্গল রাস্তায় সিআরপি দাঁড়িয়ে। এ থেকেই বোঝা যায়, এখানকার নিরাপত্তার অবস্থা।’’

Advertisement

অরণ্যশহরের একটি বেসরকারি অতিথিশিলায় রাত্রিযাপন করে আজ দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তিনি। জঙ্গলমহলে প্রতিবার সভার আগে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে রাত্রিযাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার বিরোধী দলনেতাও অরণ্যশহরে রাত্রিযাপন করায় স্বভাবতই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও সিপিএম সূত্রের দাবি, পুরুলিয়ায় দলীয় কর্মসূচির পর দিন ঝাড়গ্রামে জনসভা থাকায় সূর্যবাবু কলকাতা ফিরে না গিয়ে সরাসরি ঝাড়গ্রামে

চলে এসেছেন। পুরুলিয়া থেকে কলকাতা ফিরে গেলে নির্ধারিত সময়ে ঝাড়গ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে সূর্যবাবুর পক্ষে যোগ দেওয়া সম্ভব হতো না। তবে দলের রাজ্য সম্পাদক সভা করার আগে ঝাড়গ্রামে রাত্রিযাপন করায় সিপিএমের নিচু তলার কর্মীরা দৃশ্যতই খুশি। ঝাড়গ্রামের এক প্রবীণ সিপিএম কর্মীর কথায়, “এর আগে আমরা বহুবার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সূর্যবাবুর উপস্থিতি চেয়েছিলাম। নানা কারণে সেটা সম্ভব হয় নি। এখন উনি রাজ্য সম্পাদক হিসেবে সভা করতে আসছেন। এখানে রাত্রিযাপন করেছেন। এতে নিচু তলার কর্মীদের মনোবল অবশ্যই বাড়বে।”

সিপিএম সূত্রের দাবি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের দুনীর্তি-সহ নানা বিষয়ে এলাকাবাসীর একাংশের মধ্যে তুমুল ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু শাসক দল ও পুলিশি জুলুমে প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না আমজনতা। সূর্যবাবুর অভিযোগ, জঙ্গলমহলের উন্নয়নের দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করলেও প্রকৃত উন্নয়ন এখনও অধরা। এখানকার মানুষও ক্ষুব্ধ। কারণ, এক সময়ে যারা মাওবাদীদের হয়ে অশান্তি ছড়াত, তারাই এখন শাসকদলে ভিড়েছে। বেলপাহাড়িতে সাম্প্রতিক ল্যাম্পস্্ নির্বাচনে সবক’টি আসনে বামেদের জয় সেই ক্ষোভেরই পরিণাম হলে দাবি করেন, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।

রাজনৈতিক মহলও মনে করছেন, রীতিমতো হিসেব কষেই জঙ্গলমহলে ঝাঁপাচ্ছে বাম শিবির। কারণ, জঙ্গলমহলে বিজেপি-র কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গিয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে শাসক দলও জনসমর্থন ধরে রাখতে মরিয়া। এই আবহে রাজনৈতিক জমি দখলের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আদিবাসী-মূলবাসীরাই যে বড় ভরসা তা বলার আপেক্ষা রাখে না।

সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য সহ-সভাপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “শুধু রাস্তা তৈরি করলেই উন্নয়ন হয় না। কর্মসংস্থান হচ্ছে কোথায়? সিভিক পুলিশের নামে তো আদিবাসী-মূলবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। জঙ্গলমহলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারেও কিছুই হয় নি। বাছাই করা কয়েকটি ক্লাবকে অনুদান দিয়ে বা মেলা-খেলার আয়োজন করে সাময়িক উন্মাদনা তৈরি করা যায়। কিন্তু তাতে বেকারত্বের সমস্যা মেটানো যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন