Rampurhat Murder

Rampurhat Clash: বগটুই যখন জ্বলছিল, কিছু দূরে তখন ‘বিশেষ বৈঠকে’ ব্যস্ত ছিলেন পুলিশকর্তারা!

সিবিআইয়ের ওই কর্তা  আরও দাবি করেন, বগটুইয়ের ঘটনায় যে-এফআইআর করা হয়েছে, তাতেও ঘটনাক্রমে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এফআইআরেও প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২২ ০৬:১৯
Share:

ফাইল চিত্র।

বগটুই যখন জ্বলছিল, বীরভূম জেলা পুলিশের কর্তারা সেখানে না-গিয়ে অদূরে পুলিশেরই এক অতিথিশালায় বৈঠক করছিলেন বলে তদন্তে জেনেছে সিবিআই। তাদের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এর সমর্থন তো মিলেছেই, তদুপরি রামপুরহাটের এসডিপিও এবং আইসি-কে জিজ্ঞাসাবাদের পরে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। বগটুইয়ে ২১ মার্চের সেই আগ্নেয় রাতে পুলিশের এমন ‘নিষ্ক্রিয়তা’র পিছনে প্রভাবশালী-যোগের তথ্য মিলছে বলে জানাচ্ছেন সিবিআইয়ের অফিসারেরা।

Advertisement

তদন্তকারীদের প্রশ্ন, বগটুইয়ে যখন পরের পর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন সেখানে না পাঠিয়ে এসডিপিও সায়ন আহমেদকে ভাদু শেখের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের ধরতে চামড়াগুদাম এলাকায় তল্লাশিতে পাঠানো হয়েছিল কেন? প্রাথমিক তদন্তের পরে সিবিআইয়ের দাবি, ভাদু খুন হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পরে জেলা সদর সিউড়ি থেকে জেলা পুলিশের এক কর্তা রামপুরহাট জাতীয় সড়কে এসে পৌঁছেছিলেন। যেখান থেকে বগটুই গ্রাম মিনিট তিনেকের হাঁটাপথ। ২১ মার্চ রাত ১১টা নাগাদ বগটুই গ্রামে তখন বেশ কয়েকটি বাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, ওই পুলিশকর্তা আগুনের খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে না-গিয়ে রামপুরহাটের আইসি-কে জাতীয় সড়কে ডেকে নেন। তারও ঘণ্টাখানেক পরে জাতীয় সড়কে এসে পৌঁছন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের কয়েক জন। তখনও জ্বলে চলেছে বগটুই। সেই জ্বলন্ত গ্রামে না-গিয়ে পুলিশকর্তারা কিছুটা দূরে একটি অতিথিশালায় বৈঠক করেন বলে জানাচ্ছে সিবিআই। তাদের প্রশ্ন, কী এমন জরুরি প্রয়োজন ছিল যে, অগ্নিবিপন্ন গ্রামের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তখনই বৈঠকে বসতে হল?

সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা জানান, এসডিপিও-র সঙ্গে সব সময় স্পেশাল ফোর্স থাকে, যে-বিশেষ বাহিনীতে থাকেন অন্তত‌ দশ জন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। গ্যাস-গান, ঢাল, লাঠি, আধুনিক রাইফেল এবং পিস্তল থাকে সেই বাহিনীর সঙ্গে। সিবিআইয়ের প্রশ্ন, দুষ্কৃতীরা যে বগটুইয়ে চড়াও হয়ে পেট্রল-বোমা ছুড়ছে, আগুন লাগাচ্ছে, সেটা জানার পরেও মিনিট দশেকের দূরত্বে থাকা এসডিপিও-কে ওই গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি কেন? এমনকি রামপুরহাট থানা থেকেও পুলিশ সেই সময় বগটুইয়ে যায়নি। পরে রামপুরহাটের আইসি-র কাছ থেকে খবর পেয়ে এসডিপিও ঘটনাস্থলে পৌঁছন। প্রায় একই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় দমকলবাহিনী। আগুন নেভানোর লড়াই চালাতে থাকে দমকল। তাদের সহযোগিতা করতে থাকে এসডিপিও-র বাহিনী।

Advertisement

সিবিআই সূত্রের দাবি, আগুন নিভে যাওয়ার পরে জেলার পুলিশকর্তাদের বৈঠকে এসডিপিও-কে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। রাত ২টো নাগাদ পুলিশকর্তাদের কাছে খবর পৌঁছয়, নাজিমা বিবি নামে এক মহিলাকে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তা শোনার পরে জেলা পুলিশকর্তারা রামপুরহাটের আইসি-কে ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়ে ভোর ৩টে নাগাদ অতিথিশালার বৈঠক ছেড়ে সিউড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।

বগটুইয়ের ঘটনায় ধৃত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে দফায় দফায় জেরা করেছে সিবিআই। তদন্তকারীরা জানান, বগটুইয়ের কয়েকটি বাড়িতে আগুন
লাগার কথা তিনি জেলার শীর্ষ নেতাদের জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন আনারুল।

একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘কয়েকটি বাড়ি জ্বলছে জ্বলুক, তা নিয়ে বেশি মাতব্বরি করার প্রয়োজন নেই’ বলে এক নেতা তাঁকে ধমক দিয়েছিলেন। সেই কারণেই ঘটনার সময় তিনি বগটুইয়ে যাননি বলে জেরায় আনারুল জানিয়েছেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।

সিবিআইয়ের এক কর্তার দাবি, বীরভূম জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের উপরে যে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, একের পর এক পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সেটাই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সর্বস্তরের বদলি, পদোন্নতি রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশের ভিত্তিতেই হয়। তাই সহজেই পুলিশকর্তাদের ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকার নির্দেশ দেওয়া যায় বলে তাঁর দাবি।

সিবিআইয়ের ওই কর্তা আরও দাবি করেন, বগটুইয়ের ঘটনায় যে-এফআইআর করা হয়েছে, তাতেও ঘটনাক্রমে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এফআইআরেও প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন