Rampurhat Murder

Bogtui Incident: আগে বাঁচলে তার পরে টিকা, বলছে আতঙ্কে দিশাহারা বগটুই

নাতনি নবজাতককে নিয়ে বাড়িতে আসবে সেই আশাই ছিল ঠাকুমা লাইলি বিবির। সাবিনার বাবা বাঁটুল শেখের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, “কেমন আছে মেয়েটা জানি না।”

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

বগটুই (রামপুরহাট) শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২২ ০৬:০৮
Share:

ফাইল চিত্র।

এক সপ্তাহ আগের রাতের ঘটনার পরে অতিমারি নিয়ে ওঁদের আর ভাবার অবকাশ নেই। তাই এখন করোনার টিকা বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে কার্যত ভাবলেশহীন বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুইয়ের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, “বোমা-আগুন থেকে আগে বেঁচে থাকি। তার পরে না হয় করোনা নিয়ে ভাবব। টিকা, চিকিৎসা নয়, গ্রামে শান্তি চাই।”

Advertisement

অতিমারির প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাল রকমেরই ধাক্কা লেগেছিল বগটুই গ্রামে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয় অনেকের। কিন্তু সেই আতঙ্ক এখন উধাও। লোকজনের চোখেমুখে গত সোমবারের রাতের ভয়াবহতার ছাপ।

সোনা শেখ ও বানিরুল শেখের বাড়ির পিছন দিক দিয়ে মাঠ চিরে যে সরু রাস্তাটা চলে গিয়েছে, সেই পথ ধরে এগোতেই চোখে পড়ল পুকুরের পাড়ে বসে বাসন ধুচ্ছেন কোহিনুর বিবি। তাঁর ছেলের বয়স ১৪ বছর। ‘ছেলে করোনার টিকা নিয়েছে?’ মহিলার জবাব, “গ্রামের মানুষ আগে ভাল থাকুক। তার পরে করোনা নিয়ে ভাবব।” গ্রাম ছেড়ে দিদার বাড়ি চলে গিয়েছে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ইব্রাহিম শেখও। তার ঠাকুমা ওজ্জামা বিবির কথায়, “চারিদিকে ভয়। কী আর করবে! মঙ্গলবারই বাবা-মায়ের সঙ্গে দিদার বাড়ি চলে গিয়েছে। আগে তো বাড়ি ফিরুক। তারপর টিকা।”

Advertisement

গত সোমবার থেকে রাজ্যে ১২-১৪ বছর বয়সিদের টিকা প্রদানের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কিন্তু ওই দিন রাতেই বগটুইয়ের ঘটনা! ফলে গ্রামে ছেদ পড়েছে সেই কর্মসূচিতে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “বহু শিশুই অন্য গ্রামে চলে গিয়েছে। তাদের খোঁজ করে টিকা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। গ্রামে যাঁদের দ্বিতীয় ডোজ় বাকি, তাঁদেরও খোঁজ করে টিকা দেওয়া হচ্ছে।”

সুগার, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসারের মতো নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজের চিকিৎসায় জোর দিতে সমস্ত জেলার প্রত্যন্ত গ্রামেও সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সেখান থেকেই মেলে টেলি-মেডিসিন পরিষেবা। বগটুই পূর্বপাড়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও টেলি-মেডিসিন ও অন্যান্য চিকিৎসা মেলে। আশেপাশের কুমারড্ডা, চন্দনকুন্ঠা, পাবরোখিয়া, কামাখ্যা-র মানুষও আসেন। রোজ কমপক্ষে ৩০-৩৫ জন রোগী হয়। সুগার, রক্তচাপ ছাড়াও বিশেষ করে আসেন ত্বকের সমস্যায় ভোগা রোগীরা। কিন্তু গত ২২ মার্চ মঙ্গলবার সেই সংখ্যাও তলানিতে ঠেকেছে। ওই দিন থেকে সোমবার পর্যন্ত সাত দিনে ওই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী এসেছেন মাত্র ২৫-২৮ জন। এক স্বাস্থ্য কর্মীর কথায়, “গ্রামে তো লোকই নেই। আশপাশের গ্রাম থেকেও ভয়ে কেউ আসছেন না। যে কয়েক জন বাড়িতে রয়েছেন তাঁরাও আর বাইরে বেরচ্ছেন না।”

অগত্যা আশাকর্মী বানাতুন নাস, তুহিনা খাতুন, নাজমা খাতুনেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। খোলা দরজায় কড়া নেড়ে লোকজনকে ভরসা জোগাচ্ছেন, ‘ভয় নেই। রাস্তায় পুলিশ রয়েছে। আমরা রয়েছি। চিকিৎসার দরকারে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসুন। রোগকে ফেলে রাখবেন না।’

তৃতীয় সন্তানের জন্মের আগেই বগটুইয়ের পূর্বপাড়ায় বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে এসেছিলেন সাবিনা খাতুন। ১৮ মার্চ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া আশাকর্মী আশমা খাতুন বলেন, “পরের দিন ওঁর মেয়ে হয়েছে। কিন্তু ২২ মার্চের ঘটনার পরে আর বাবার বাড়িতে ফেরার সাহস পায়নি সাবিনা। উল্টে বৃদ্ধ বাবা-মা এবং সদ্যজাতকে নিয়ে ইমামনগরে শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছেন।” নাতনি নবজাতককে নিয়ে বাড়িতে আসবে সেই আশাই ছিল ঠাকুমা লাইলি বিবির। সাবিনার বাবা বাঁটুল শেখের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, “কেমন আছে মেয়েটা জানি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন