ওড়িশার সিঁধেল চোর চক্রের আবছা যোগ দেখছে সিআইডি

তারা দড়িবাঁধা শাবল কাঁধে নেয় রাইফেলের কায়দায়! তারা মানে ওড়িশার কিছু সিঁধেল চোর। এটুকু পলকা সূত্র দিয়ে চোর ধরা যে খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার চেয়েও কঠিন, টের পেয়েছে সিআইডি। তবে ওই চোরেদের সঙ্গে রানাঘাট কাণ্ডের একটা ঝাপসা যোগ পাচ্ছে তারা।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৪:১৫
Share:

তারা দড়িবাঁধা শাবল কাঁধে নেয় রাইফেলের কায়দায়! তারা মানে ওড়িশার কিছু সিঁধেল চোর। এটুকু পলকা সূত্র দিয়ে চোর ধরা যে খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার চেয়েও কঠিন, টের পেয়েছে সিআইডি। তবে ওই চোরেদের সঙ্গে রানাঘাট কাণ্ডের একটা ঝাপসা যোগ পাচ্ছে তারা।

Advertisement

রানাঘাটে বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ ও কনভেন্টে লুঠতরাজের ঘটনায় অপরাধীদের কেউ ধরা পড়েনি। সিসিটিভি-র ফুটেজ যাদের ধরেছে এবং যাদের স্কেচ আঁকানো হয়েছে, তাদের টিকিরও দেখা নেই। তবে ওই ঘটনায় চোরেদের একটি আন্তঃরাজ্য দলের যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং সেটি ওই ওড়িশার দল। অন্য রকম তথ্য বলতে এটুকুই। এখানে এসেই থমকে গিয়েছে সিআইডি।

সিআইডি-র একটি সূত্রের খবর, রানাঘাট কাণ্ডে সিসিটিভি-র ফুটেজে এমন দু’জনকে দেখা যাচ্ছে, যাদের মুখ গোয়েন্দাদের কাছে পরিচিত। ২০১১ থেকে ’১৩ পর্যন্ত ওড়িশার জাজপুর রোড ও ভুবনেশ্বর এলাকার কয়েকটি তল্লাটে বড় বড় গয়নার দোকান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার অলঙ্কার চুরি যায়। কয়েকটি দোকানের সিসিটিভি-র ফুটেজে সিঁধেল চোরেদের ওই দলটির কয়েক জনের ছবি মিলেছিল। ওড়িশা পুলিশের একটি দল বছর দুয়েক আগে ভবানী ভবনে এসে সেই সব ফুটেজের কপি সিআইডি-কে দিয়ে ওই দুষ্কৃতীদের হদিস পেতে সাহায্য চায়।

Advertisement

“ওড়িশা পুলিশের দেওয়া ভিডিও ফুটেজে যে-সব দুষ্কৃতীকে দেখা গিয়েছিল, তাদের দু’জনের সঙ্গে রানাঘাটের ঘটনায় পাওয়া ভিডিও ফুটেজের দু’জনের অনেকটা মিল আছে,” বললেন এক গোয়েন্দা-কর্তা। রাজ্য পুলিশের কয়েক জন অফিসার ওড়িশা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দাগি চোরেদের ওই দল সম্পর্কে তথ্য পেলে তা সিবিআই-কে দেওয়া হবে। ওড়িশার ওই দলের প্রায় কাউকেই ধরা যায়নি।

ছ’সাত মাস আগে হুগলির পাণ্ডুয়ায় একটি সোনার দোকানে একই কায়দায় চুরি হয়েছিল। সেখানেও দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল দুষ্কৃতীদের ছবি। রাজ্য পুলিশের এক অফিসার বলেন, “পাণ্ডুয়ার ঘটনায় জড়িত দলটির সঙ্গে ওড়িশা পুলিশের দেওয়া ভিডিও ফুটেজের কয়েক জনের মিল পাওয়া যাচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে, ওড়িশা ও পাণ্ডুয়ায় চুরি সম্ভবত একই দলের কাজ এবং ওই দলের অন্তত দু’জন রানাঘাটের ঘটনাতেও জড়িত।”

সিআইডি সূত্রের খবর, ওড়িশার ওই দুর্বৃত্তদলের কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। দলটির কারও হদিস পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা বড় অসুবিধা বলে ওড়িশা পুলিশ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে।

কারও হদিস না-পেলেও গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করেন, আন্তঃরাজ্য দুর্বৃত্তদলের কয়েক জন, স্থানীয় কিছু লোক ও বাংলাদেশের কয়েক জন দুষ্কৃতী মিলে দল গড়ে রানাঘাটে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় দুষ্কৃতী ও বাংলাদেশ থেকে আসা দুষ্কৃতীদের জড়িত থাকার কথা বলা হচ্ছে কীসের ভিত্তিতে?

গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, প্রথমত, স্থানীয় কারও কাছ থেকে খবর না-পেলে বাইরে থেকে এসে কারও পক্ষে কনভেন্টে ও-ভাবে হামলা চালানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, সীমান্তবর্তী এলাকায় সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা গিয়েছে, চুরি-ডাকাতি-লুঠ করতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা দুষ্কৃতীরা মহিলাদের অসম্মান করেছে।

এই ধরনের সম্ভাব্য সূত্র থাকা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের ধরা যাচ্ছে না কেন?

এক সিআইডি অফিসার বলেন, “এলাকায় এলাকায়, তল্লাটে তল্লাটে চর নিয়োগ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা--- আমাদের এ-সব বন্দোবস্ত ইদানীং তলানিতে ঠেকেছে। আমরা এখন অনেক বেশি নির্ভরশীল বৈদ্যুতিন সূত্র ও নজরদারির উপরে।”

সেই নজরদারি এড়াতে দুষ্কৃতীরা যখন মোবাইল ব্যবহার না-করার মতো কৌশল নিচ্ছে? “তখন ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই জুটবে না। তাই ৯৬ ঘণ্টা ধরে তদন্ত চালিয়েও কাজের কাজ কিছুই হল না। স্থানীয়দের কারা জড়িত, সেটাও আমরা জানতে পারলাম না। তদন্তভার চলে গেল সিবিআইয়ের হাতে,” বলছেন ওই অফিসার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন