দুর্গাপুরের বেনাচিতিতে গুলি খেয়ে পড়ে রাহুল শাহ। —নিজস্ব চিত্র
শনিবারের বারবেলায় এ যেন ‘সেমসাইড’! দুর্গাপুরের রাস্তায় এক যুবকের উপরে চড়াও হয়েছিল জনা কুড়ির একটি দল। মারধরের সময়ে দলের লোকের বেমক্কা চালানো গুলিতে প্রাণ গেল হামলাকারীদের এক জনের। বেআইনি কয়লা কারবার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ দিন দুর্গাপুরের বেনাচিতির মসজিদ মহল্লায় এমনই ঘটেছে বলে দাবি পুলিশের।
নিহত রাহুল শাহ (২৫) শহরের ভিড়িঙ্গির একটি কয়লার গুদামে কাজ করতেন। যাঁর উপরে হামলা চালাতে এসে এই ঘটনা, সেই ফিরোজ আলি দুর্গাপুর হাসপাতালে ভর্তি। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, ‘‘ঘটনার পরেই চার জনকে ধরা হয়েছে। রাহুল হামলাকারীদের সঙ্গেই এসেছিল বলে জানা গিয়েছে।’’
ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকালে। বস্তায় কয়লা ভরে সাইকেলে করে শহরে নানা বেআইনি ডিপোয় পৌঁছে রোজগার করে অনেকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে তেমনই এক জন মসজিদ মহল্লার একটি গুদামে কয়লা পৌঁছতে যাচ্ছিলেন। এলাকার এক যুবক রাস্তা আটকে হুমকি দেয়, সেখানে নয়, কয়লা দিতে হবে ভিড়িঙ্গির ডিপোয়।
অভিযোগ, সাইকেল আরোহী রাজি না হওয়ায় তাঁকে মারধর করে ওই যুবক। তা দেখে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ ও তাঁর ভাই আফরোজ আলি। আফরোজ বলেন, ‘‘আমরা বলি, যাঁর যেখানে ইচ্ছে হবে সেখানে কয়লা দেবে। তা নিয়ে অশান্তি করা যাবে না।’’ তাঁর দাবি, তখন রাস্তা আটকানো যুবকটি ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এর পরেই দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ হামলা হয় ফিরোজের উপরে। অভিযোগ, মোটরবাইকে চড়ে আসা জনা কুড়ির দলটি বাড়ি থেকে খানিক দূরে রাস্তায় ধরে ফেলে ফিরোজকে। লাঠি-রড দিয়ে তাঁকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোলমালের মাঝে হঠাৎই গুলির শব্দ শোনা যায়। রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন রাহুল। গলা থেকে রক্ত ঝরছিল। তাঁর সঙ্গীরা তড়িঘড়ি মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দেয়।
রাহুলকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। স্টিল টাউনশিপের বাসিন্দা রাহুলের বিরুদ্ধে এর আগে পুলিশের খাতায় মারপিটের অভিযোগ রয়েছে। তবে পরিবারের দাবি, অবৈধ কয়লার কারবারের সঙ্গে রাহুল কোনও ভাবেই জড়িত ছিলেন না। পুলিশ সূত্রের খবর, ফিরোজ তাদের কাছে দাবি করেছেন, তাঁর দিকে চালানো গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে রাহুলের গলায় লাগে। পুলিশ জানায়, ওয়ান শটার থেকে একটি গুলি ছোড়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলের আশপাশের কিছু বাসিন্দার যদিও দাবি, তাঁরা চার বার গুলির আওয়াজ পেয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া দু’টি মোটরবাইকের মালিকের খোঁজ চলছে। ফিরোজ ও তাঁর ভাই কয়লা কারবারের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। ঘটনার পিছনে কয়লা কারবারে বিবাদের কথা ফিরোজের পরিবার মানতে চায়নি। তাঁর মা সায়মা বেগম বলেন, ‘‘কিছু পড়শি আমাদের শত্রু। ওরাই লোক দিয়ে আমার ছেলেকে এ ভাবে মেরেছে।’’ শহরে প্রকাশ্য রাস্তায় এমন ঘটনায় আতঙ্কে এলাকাবাসী। অনেকেই বলেন, ‘‘দিনদুপুরে এমন কাণ্ড ঘটল, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে!’’