মেদিনীপুর আদালতে পিংলা বিস্ফোরণে ধৃত রঞ্জন মাইতি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দহরম-মহরম আর সেই সূত্রে পুলিশের কাছে কিঞ্চিৎ সমীহ আদায়— এই দুই সম্পর্ককে ঢাল করেই ব্রাহ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি-বোমার কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন রঞ্জন মাইতি ও সঙ্গী রামপদ মাইতি।
রামপদ অবশ্য বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জলচক থেকে গ্রেফতার হয়েছেন রঞ্জনও। শুক্রবার তাঁকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হলে ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিস্ফোরক আইন, অনিচ্ছাকৃত খুন-সহ আটটি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
গ্রামবাসীরা জানান, পালাবদলের আগে এই রঞ্জনই ছিলেন বামেদের ঘনিষ্ঠ। তবে রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য গড়তে সময় লাগেনি তাঁর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পিংলার তৎকালীন ব্লক তৃণমূল সভাপতি গৌতম জানার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরেই দাপট বেড়েছিল রঞ্জন আর রামপদর। আগে পিংলারই সুদছড়া গ্রামের বাড়িতে বাজি কারখানা চালাতেন রামপদ। সেখানে ছোটখাটো এক বিস্ফোরণের পরে রঞ্জন তাঁকে নিয়ে আসেন ব্রাহ্মণবাড়ে। রঞ্জনের বাড়ি লাগোয়া জমিতে তৈরি হয় নতুন বাজি কারখানা।
শাসক দলের নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে পুলিশও তাঁকে বিশেষ ঘাঁটাত না। ফলে, গ্রামবাসীরা বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও রঞ্জন-রামপদকে ছুঁতে পারেনি পুলিশ। পিংলা থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের হাত-পা বাঁধা। চাইলেও অনেক কাজ করতে পারেনি।’’
বিস্ফোরণের পরে অবশ্য স্থানীয় তৃণমূল নেতারা রঞ্জনকে দলীয় সদস্য হিসেবে স্বীকার করতে চাননি। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘ওঁকে চিনতামই না। দলের সঙ্গে ওঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না।’’ তবে স্থানীয় বাসিন্দারা, রঞ্জনকে ব্রাহ্মণবাড় গ্রামের বুথ সভাপতি হিসেবেই চেনেন। আর তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী সুলেখা মাইতি ছিলেন তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের অঞ্চল কমিটির নেত্রী।
গৌতম জানা অবশ্য এ দিন তাঁদের ওই দলীয় পদের কথা মানতে চাননি। দলের ব্লক সভাপতির পদ থেকে সদ্য অপসারিত গৌতমবাবুর দাবি, ‘‘পালাবদলের আগে ফরওয়ার্ড ব্লক করত রঞ্জন। আমাদের দলে আসতে চেয়েছিল। ওঁকে নেওয়া হয়নি। তবে সুলেখা দলে যোগ দিতে চাইলে ওঁকে কাজ করতে বলা হয়েছিল।’’
রামপদও সিপিএমের ছত্রছায়ায় ছিল বলেই গৌতমের দাবি। সিপিএমের পিংলা জোনাল কমিটির সম্পাদক নয়ন দত্ত অবশ্য বলেন, “বামফ্রন্টের সঙ্গে ওদের কোনও কালেই সম্পর্ক ছিল না।’’
পিংলা থানায় কালীমন্দির তৈরির সময় মোটা টাকা চাঁদা দিয়েছিল রাম-রঞ্জন। আগে পিংলা থানা চত্বরে স্থায়ী কোনও মন্দির ছিল না। ম্যারাপ বেঁধেই পুজো হত। বছর দু’য়েক আগে থানার সামনে মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। গত বছর সেই মন্দিরে পুজোও হয়েছে। পুজোর রাতে আতসবাজি, শব্দবাজিতে থানা চত্বর সরগরম ছিল। সে বাজি যে রামের কারখানাই জুগিয়েছিল বলা বাহুল্য। গ্রামবাসীরা বলছেন— এরপরেও রঞ্জনকে গাঁটাবে পুলিশ, তাই কখনও হয়!