ধর্ষণে ধৃত বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতা

পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন এক বছর ধরে। গ্রেফতারি এড়াতে আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছিলেন হাইকোর্টেও। তবে লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন বাড়ির পরিচারিকাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত তৃণমূলের বাঁকুড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অলক সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

বাঁকুড়া আদালতে ধৃত অলক সিংহ। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন এক বছর ধরে। গ্রেফতারি এড়াতে আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে দ্বারস্থ হয়েছিলেন হাইকোর্টেও। তবে লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন বাড়ির পরিচারিকাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত তৃণমূলের বাঁকুড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অলক সিংহ।

Advertisement

শনিবার সকালে বাঁকুড়ার তিলাবেদিয়া এলাকা থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এ দিন ধৃতকে বাঁকুড়া আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

গত বছর ৯ জুলাই অলকবাবুর বিরুদ্ধে তাঁর বাড়ির পরিচারিকাকে ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। ওই পরিচারিকা গর্ভবতী হয়ে যান বলেও অভিযোগ। বর্তমানে ওই তরুণী বাঁকুড়া শহরের একটি হোমে রয়েছে। কয়েক মাস আগে তার একটি পুত্র সন্তানও হয় বলে ওই হোম সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

অলকবাবুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নামে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। যদিও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের খাতায় তিনি ছিলেন ফেরার।

তবে বিরোধীরা বারবার পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত ও গ্রেফতারিতে গড়িমসি করার অভিযোগ তুলেছেন। পথসভায় বিরোধী দলের নেতারা একাধিকবার অভিযোগ তুলেছেন, অলকবাবু এলাকায় থাকলেও পুলিশ তাঁকে ইচ্ছে করে ধরছে না। এ দিন অলকবাবুর গ্রেফতারির খবর শুনে সিপিএমের বাঁকুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তকে এতদিনে পুলিশ ধরেছে শুনে স্বস্তি পেলাম। তবে আমরা এখনও বলব অলকবাবু কোথাও যাননি, তিনি এলাকাতেই ছিলেন। এতদিন শাসকদলের নির্দেশ মিলছিল না বলেই পুলিশ তাঁকে ধরেনি।” সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা সুদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও পুলিশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাঁকুড়া সদর থানা।

ঘটনা হল, অলকবাবুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকে জেলা তৃণমূল নেতাদের অনেককেই তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল। যদিও ধীরে ধীরে দলের নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে অলকবাবুর। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে সেই পদের ভার দেওয়া হয় ওই পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কবিতা বাউরিকে। এখনও তিনিই বাঁকুড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ সামলাচ্ছেন।

তৃণমূলের জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অলক যেহেতু ফেরার ছিল, তাই সভাপতির দায়িত্ব সহ-সভাপতিকে দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি বিচারাধীন। তাই দল এখনই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে না।’’ তিনি দাবি করেন, কোনও ভাবেই দল থেকে পুলিশকে কখনই কোনও নির্দেশ দেওয়া হয় না।

এ দিন অলকবাবুর সঙ্গে দেখা করতে দলের কোনও নেতাকে আদালত চত্বরে আসতে দেখা যায়নি। সাংবাদিকদের কাছ থেকে মুখ লুকোনোর চেষ্টা করতে গিয়ে কখনও প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে দৌড়ে কোর্টলক আপে চলে গিয়েছেন অলকবাবু। কখনও আবার মুখে রুমাল ঢাকা নিয়ে ক্যামেরা এড়াতে চেয়েছেন তিনি।

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বারবার প্রশ্ন করা হলেও কোনও উত্তর দেননি অভিযুক্ত। আদালত কক্ষে ঢুকেও কোনও কথা বলেননি। তাঁর পক্ষের আইনজীবী তাপস চৌধুরী বিচারকের সামনে অলকবাবুর শারীরিক অসুস্থতার প্রসঙ্গ তুলে জামিনের আবেদন করেন। যদিও বিচারক সেই আবেদন খারিজ করে দেন। তাপসবাবু বলেন, “আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর জামিনের আবেদন জানিয়েছিলাম। খারিজ হয়েছে।” এ দিন আদালতে নির্যাতিতার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।

বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “ধৃতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। তিনি এতদিন পলাতক ছিলেন। এ দিন পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন