কলেজ কমিটি

নয়া বিলে নেতাদের দরজা খোলা

কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে আরাবুল ইসলামের মতো নেতাদের বসানোর রাস্তা খোলাই রাখছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪২
Share:

কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে আরাবুল ইসলামের মতো নেতাদের বসানোর রাস্তা খোলাই রাখছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

গত মাসে বিধানসভায় যে শিক্ষা বিল আনার চেষ্টা হয়েছিল, তাতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বদলে শিক্ষাবিদদেরই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি-পদে বসানোর প্রস্তাব ছিল। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি নিয়ন্ত্রণ নানা ভাবে আরও জোরদার করার প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিলটি পেশ করা হয়নি। এ বার সেটি স‌ংশোধিত আকারে বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে পেশ করার ভাবছে রাজ্য সরকার। সংশোধিত অংশে ‘শিক্ষাবিদের’ পরিবর্তে ‘শিক্ষাবিদ অথবা জনপ্রতিনিধি’ করা হচ্ছে।
কেন এই সংশোধন, তার ব্যাখ্যায় না গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজ পরিচালন সমিতিতে শিক্ষাবিদ অথবা জনপ্রতিনিধি থাকবেন, এমনটাই বিলে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। বিলে এর ব্যাখ্যাও থাকবে।’’ তবে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বদলে শিক্ষাবিদদের কলেজ পরিচালন সমিতির মাথায় বসানোর প্রস্তাবে আপত্তি এসেছে মূলত শাসক দলের বিধায়কদের তরফেই। তাঁদের কারও কারও যুক্তি, কলেজে গন্ডগোল হলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা যে ভাবে বিষয়টি সামলাতে পারবেন শিক্ষাবিদেরা হয়তো তা পারবেন না। বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, নিজেদের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার ভয়েই তৃণমূল বিধায়কদের এত আপত্তি। কিছু শিক্ষক সংগঠনও এর সমালোচনা করেছে। ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ শুক্রবার বলেন, ‘‘আমরা কলেজের পরিচালন সমিতি গঠনে অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরোধী। পরিচালন সমিতির মাথায় বসুন বিদ্বজ্জনেরাই।’’
শ্রুতিনাথবাবু বলেন, স্থগিত হয়ে যাওয়া বিলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি খোলা রাখা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল কোন শিক্ষাবিদকে কলেজ পরিচালন সমিতির মাথায় বসানো হবে, তা ঠিক করে দেবে রাজ্য সরকার। শ্রুতিনাথ জানান, এই বিষয়টি নিয়েও তাঁদের আপত্তি রয়েছে।
ঘটনা হল, শিক্ষাক্ষেত্রে দলতন্ত্রের রমরমা বামফ্রন্ট আমলেই শুরু হয়েছিল। সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের আমলে শিক্ষার সব ক্ষেত্রে দলের লোক বসানোর রেওয়াজটি পূর্ণতা পায়। ২০১১ সালে রাজ্যে পট পরিবর্তনের পরে শিক্ষাঙ্গনে এই ‘অনিলায়ন’ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যের অধিকাংশ কলেজের মাথায় এখনও জাঁকিয়ে বসে আছেন শাসক দলের নেতারা। যেমন, শ্যামাপ্রসাদ কলেজে দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়পুরিয়া কলেজের সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে থেকে গিয়েছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা। সম্প্রতি একের পর এক গোলমালের জেরে তাঁকে সরিয়ে সেখানে বসানো হয় তৃণমূলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মৌলানা আজাদ কলেজেরও শীর্ষে রয়েছেন তিনি। এবং এখনও কলকাতার একাধিক কলেজের পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন শশী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন