বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়

বারবার ঘেরাও, সরকারি আশ্বাস তবু মেলা ভার

শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের অর্ধেক। স্থায়ী শিক্ষাকর্মী নেই একজনও। উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ামক এবং একজন ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া স্থায়ী কোনও আধিকারিক নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

শিক্ষকের সংখ্যা প্রয়োজনের অর্ধেক।

Advertisement

স্থায়ী শিক্ষাকর্মী নেই একজনও।

উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ামক এবং একজন ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া স্থায়ী কোনও আধিকারিক নেই।

Advertisement

কর্মীরা রসিকতা করে বলেন ‘ভূতে’ চালাচ্ছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়। আট বছর ধরে একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যত ‘নিধিরাম সর্দার’ করে রাখায় কর্মীরা বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন
যখন-তখন। সোমবার সকাল
থেকে টানা ২৩ ঘণ্টা কর্মসমিতির সদস্যদের ঘেরাও করে রাখার নজির রেখেছেন বারাসতের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা।

৪৯টি কলেজের ১ লক্ষ ৪২ হাজার ছাত্রছাত্রীর ভাগ্য নির্ধারণ করে যে বিশ্ববিদ্যালয়, তাকে কেন এমন পঙ্গু করে রাখা হয়েছে, তার কোনও ব্যাখ্যা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের কাছে নেই। সব সমস্যা একটু একটু করে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে বিকাশ ভবন থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে, তার কোনও ইঙ্গিতই নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
এই ভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে জিইয়ে রাখার কী অর্থ, সেই প্রশ্নও কিন্তু উঠে গিয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে মঙ্গলবার উপাচার্য ও অন্যদের ঘেরাওমুক্ত করেছে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠন। কিন্তু তার পরেও বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখার ভরসা পাননি কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বাসব চৌধুরী বলছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’’ চুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকর্মীদের বেতনবৃদ্ধি বা স্থায়ীকরণ কোনও বিষয়ই উপাচার্যের হাতে নেই, তা কর্মচারীরা জানা সত্ত্বেও কেন এই ঘেরাও, সেই প্রশ্ন তুলেছেন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠেরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, শুরুর সময় থেকেই এখানে স্থায়ী কোনও শিক্ষাকর্মী নেই। পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড বিলি থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, সবটাই নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩ জন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষাকর্মীর উপরে। বাসববাবু জানান, বিভিন্ন সময়ে ফল প্রকাশ করতে গিয়ে, সার্টিফিকেট বা মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট দিতে গিয়ে অনেক দেরি হয়ে যায়। যার অন্যতম একটা কারণ স্থায়ী শিক্ষাকর্মীর অভাব।

যে সংগঠনটি উপাচার্যদের ২৩ ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখেছিল সেই তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু কর্মচারী সমিতির সম্পাদক শেখ জাকির হোসেন বলেন, ‘‘এত কম সংখ্যক শিক্ষাকর্মী থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল ঠিক সময়েই প্রকাশ করা হয়। প্রশাসনিক অন্য কাজও যথাসম্ভব ঠিক রাখার চেষ্টা করি। তা হলে আমাদের দাবি মানা হবে না কেন?’’ দাবি মানা না হলে পুজোর পরে ফের বৃহত্তর আন্দোলনের ডাকও দিয়েছেন তাঁরা।

টাকা তো দেবে রাজ্য সরকার, স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্তও তাদের। তা হলে উপাচার্যকে ঘেরাও করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে কী লাভ? জবাব দেননি কর্মচারী সংগঠনের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তপন দত্ত অবশ্য জানান, সমস্যা মেটানোর উপায় রয়েছে। কী সেই উপায়? রেজিস্ট্রার জানান, সরকারের এমন আইন রয়েছে যাতে চুক্তিভিত্তিকদের স্থায়ীকরণ, ৩ শতাংশ হারে বেতন বাড়ানো, অবসরের বয়স সংক্রান্ত বিষয় নির্দিষ্ট করা যায়। বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব কি না, তা পর্যালোচনার জন্য উচ্চশিক্ষা দফতরকে জানানো হয়েছে।

কী বলছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়? সরকারের ‘পাশে থাকার’ দাবি যে তাঁরা পালন করেছেন, সেই কথাই জোর দিয়ে বলছেন তিনি। তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এত সমস্যা কেন? পার্থবাবু বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘেরাও তো উঠে গিয়েছে। আর শুধু তো আমাদের শিক্ষাবন্ধু নয়, সিটুর লোকও ছিল ওই ঘেরাওয়ে।’’ কিন্তু যা নিয়ে আন্দোলন, তা সমাধানের জন্য কী ভাবছেন? মন্ত্রী কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন