অ্যাপোলো হাসপাতালে সঞ্জয় রায়ের মৃত্যু নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় চাইল স্বাস্থ্য দফতরের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার ওই রিপোর্ট পেশের কথা ছিল। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘তদন্তে কিছু ফাঁক রয়েছে। সব খতিয়ে দেখে সম্পূর্ণ রিপোর্ট পেশ হবে।’’ আজ, শুক্রবার ওই রিপোর্ট পেশ হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
এ দিন সন্ধ্যায় নবান্ন ছাড়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কমিটি স্বাস্থ্য দফতরকে রিপোর্ট দেবে। ওরাই দেখবে।’’
সঞ্জয়ের মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। তাদের দাবি, তদন্তে অ্যাপোলোর গাফিলতি প্রমাণিত। ওই দিনই স্বাস্থ্যসচিব রাজেন্দ্র শুক্ল নবান্নে ঘোষণা করেছিলেন, কার গাফিলতি কত, তা নির্দিষ্ট করতে স্বাস্থ্য অধিকর্তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন হবে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন এসএসকেএমের গ্যাসট্রোএন্টেরোলজি-র প্রধান গোপালকৃষ্ণ ঢালি ও সার্জারি-র মাখনলাল সাহা। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের রিপোর্ট জমার কথা ছিল।
কার গাফিলতি কত, তা নিয়ে তদন্তকারীরা মুখ না খুললেও সূত্রের খবর, বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার বিলের টাকা মাত্রাতিরিক্ত বেশি নেওয়া হয়েছে। তার পরেও সঞ্জয়ের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ চিহ্নিত করে তা আটকানো যায়নি। সময় মতো অস্ত্রোপচারও হয়নি।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, সঞ্জয়ের লিভার থেকে অবিরাম রক্তক্ষরণ ঠেকাতে অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশন নামে এক ধরনের চিকিৎসা হওয়ার কথা বলা রয়েছে অ্যাপোলোর রিপোর্টে। কিন্তু সঞ্জয়ের ওই চিকিৎসা আদৌ হয়েছিল কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তদন্ত কমিটির কাছে ওই পরীক্ষা হওয়ার প্রমাণই দিতে পারেনি অ্যাপোলো। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও ওই পরীক্ষার প্রমাণ মেলেনি। পাশাপাশি, ওই পরীক্ষার জন্য অ্যাপোলো বিল করেছিল এক লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ওই পরীক্ষা করতে বড়জোর ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাগার কথা।
সঞ্জয়ের ম়ৃত্যুর তদন্তে অ্যাপোলো-র চিকিৎসা এবং বিল সংক্রান্ত নথিতে গরমিল পাওয়ার পরে লালবাজার জানতে চেয়েছিল, কাদের নির্দেশে ওই বিল তৈরি হয়েছিল। ওই হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট ও বিলিং বিভাগের এক শীর্ষ কর্তাকে তিন দিন ধরে জেরার পরে এ দিন তদন্তকারীরা বিল তৈরির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁর সঙ্গে স্নায়ুরোগ ও অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের তিন চিকিৎসককেও জেরা করে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, সঞ্জয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিল তৈরির ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি যুক্ত। তাঁকে এ দিন ফুলবাগান থানায় ডাকা হয়। পুলিশ জেনেছে, বিল তৈরির সঙ্গে চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের কয়েক জনও যুক্ত থাকে। তাঁদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে লালবাজার।