বিপ্লবের নভেম্বরে অভিষেকে উচ্ছ্বাস, মুকুলের শ্রীরাম

রাজনীতির শহর এবং উদযাপনের শহর কলকাতায় মঙ্গলবার এমনই তিন ধারার ত্র্যহস্পর্শ ঘটল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৭
Share:

জন্মদিনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। মঙ্গলবার কালীঘাটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নভেম্বর বিপ্লবের দিন। একই দিনে জন্মেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজরা চত্বর এবং হরিশ মুখার্জি রো়ডের একাংশ প্রায় অবরুদ্ধ যুব তৃণমূল সভাপতির জন্মদিন পালনে। আবার একই দিনে শহরের অন্য প্রান্তে মুকুল রায়ের মুখে জয় শ্রীরাম শোনা যাচ্ছে! তাঁর নতুন দলের দফতরে।

Advertisement

রাজনীতির শহর এবং উদযাপনের শহর কলকাতায় মঙ্গলবার এমনই তিন ধারার ত্র্যহস্পর্শ ঘটল। সুদূর সোভিয়েতের দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লবের শতবর্ষকে স্মরণ করে একশো লাল পতাকা হাতে পথ হাঁটলেন কমরেডরা। লাল গোলাপ এবং রজনীগন্ধার মালা হাতে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা ভিড় করলেন কালীঘাটে অভিষেকের দফতরের সামনে। অন্য রকম বিপ্লব ঘটিয়ে সদ্যপ্রাক্তন তৃণমূল মুকুল আবার আপন করে নেওয়ার চেষ্টা চালালেন বিজেপি-কে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মন বুঝে বাঁকা কথা ছেড়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও মুকুলকে তাঁর দলের মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মর্যাদা দিলেন!

সকাল থেকেই দুই যুযুধান সিপিএম ও তৃণমূলের কর্মীরা তৎপর হয়েছেন দুই ভিন্ন কারণে। এক দল এক পুরনো স্বপ্নের রোমান্টিকতায়। অন্য দল প্রিয় নেতার প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্যে। নভেম্বর বিপ্লবের সেই ১০ দিন মনে রেখে সিপিএমের সব দফতর এখন একশো পতাকা ও লাল পতাকায় সজ্জিত। সকাল সকাল শতবর্ষের মিছিল করে বাম নেতা-কর্মীরা চলে এসেছিলেন ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির নীচে। যেখানে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, মুর্তিতে মালা দিয়ে বক্তৃতা করলেই নভেম্বর বিপ্লব উদযাপন হয়ে যায় না। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি চলে গিয়েছেন খাস রাশিয়াতেই। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ফাঁকে দেখা করেছেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ রাশিয়ান ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গেনেডি জুগানভের সঙ্গে।

Advertisement

আন্তর্জাতিকতার এমন গুরুপাক ছেড়ে জেলা থেকে তৃণমূল কর্মীরা বরং বাসে চেপে ভিড় করেছেন কালীঘাট তীর্থে। মুর্শিদাবাদের যুব সভাপতি সৌমিক হোসেন যেমন ৩১ কিলোগ্রামের কেক, ছানাবড়া এবং গোলাপ ও রজনীগন্ধার ৩১ কিলোগ্রামের মালা উপহার দিয়েছেন অভিষেককে। বিকালে হরিশ মুখার্জি রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই দফতরের সামনে তাঁর গাড়ি থামতেই যুব সভাপতির গলায় রজনীগন্ধার মালা পরিয়ে দিয়েছেন ছোট কাকা স্বপন (বাবুন) বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়াও। শুভার্থীদের সঙ্গে হাত মেলাতে নিরাপত্তার বেষ্টনী পেরিয়ে এসেছেন অভিষেক। ফুটপাথে বসেছেন প্লাস্টিকের চেয়ারে। কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে হাত মেলাতে মেলাতেই অভিষেকের মন্তব্য, ‘‘মানুষের এই উচ্ছ্বাসে আমি অভিভূত!’’ এ সব পর্ব সেরে সন্ধ্যায় পিসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে আশীর্বাদ নিতে গিয়েছেন।

বিজেপি দফতরে মুকুল দিনটা কাটিয়েছেন তুলনায় নিরিবিলিতে। সোমবারই তিনি বলেছিলেন, এ রাজ্যে দিলীপবাবুই তাঁর ক্যাপ্টেন। আগরপাড়ায় গিয়ে দিলীপবাবু এ দিন পাল্টা প্রীতি দেখিয়েছেন, ‘‘উনি যদি আমায় ক্যাপ্টেন বলেন, তা হলে তো বলতে হয়, ভারত ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন যেমন কোহলি, তেমনই মুকুল রায় হলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘খিচুড়ি আর ঘি এক হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের মানুষ তার স্বাদ পাবেন।’’

লেনিন, অভিষেক, মুকুল, দিলীপ— স্বাদ্য সত্যিই অভিনব!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement