ভারী ট্রাক, ট্রেলার সমস্যার সুরাহায় হাতিয়ার রো-রো

মাঝেরহাট সেতুর বিপর্যয়ের পরে ভারী ট্রাক-ট্রেলার চলাচল নিষিদ্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। তা নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৪
Share:

মাঝেরহাট সেতুর বিপর্যয়ের পরে ভারী ট্রাক-ট্রেলার চলাচল নিষিদ্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। তা নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে। তারই মধ্যে বিকল্পের খোঁজ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। বলছেন, সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে রাজ্যের উদ্বেগ কমতে পারে জল-পরিবহণের গুরুত্ব বাড়লে।

Advertisement

পরিবহণ দফতরের কর্তাদেরও একাংশ মনে করছেন, শহরের ব্যস্ত রাস্তা ও সেতু এড়িয়ে বন্দর-সহ বিভিন্ন গন্তব্যে শত শত ভারী ট্রাক-ট্রেলার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে ‘রোল অন-রোল অফ’ বা রো-রো (বিশেষ ধরনের বার্জ) পরিষেবা। গঙ্গাকে কেন্দ্র করে জলপথ পরিবহণে বিকাশের যে-বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, রাজ্যে তার খুব অল্প অংশকেই কাজে লাগানো গিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের আগ্রহেই বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স এবং এক বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থার তরফে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সমগ্র পরিকল্পনা নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্কও।

কলকাতা থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত গঙ্গার ৫৬০ কিলোমিটার নদীপথে আটটি সেতু রয়েছে। তার মধ্যে কলকাতা লাগোয়া এলাকাতেই রয়েছে চারটি— বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্র, বিবেকানন্দ ও নিবেদিতা সেতু। সব সেতু এবং তার লাগোয়া রাস্তাতেই বেড়ে চলা গাড়ির চাপ খুব বড় সমস্যা। জেলার সেতুরও একই অবস্থা। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, সেতু ও সড়ক পরিবহণের উপরে অত্যধিক নির্ভরতার ফলে প্রধান সেতুগুলিতে চাপ তো বাড়ছেই। চাপ পড়ছে লাগোয়া রাস্তায় থাকা মাঝারি এবং ছোট সেতুর উপরেও। তাই প্রায় সব ধরনের সেতুর স্বাস্থ্য নিয়েই বাড়ছে উদ্বেগ। কল্যাণী এবং বাঁশবেড়িয়ার মধ্যে সংযোগকারী ঈশ্বর গুপ্ত সেতুর স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার পরে সেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

Advertisement

বিকল্প কী?

পরিবহণ দফতরের অনেকের বক্তব্য, বড় ট্রাক ও ট্রেলার পারাপারের উপযোগী রো-রো পরিষেবা ব্যবহার করে কলকাতা তো বটেই, রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের সেতু এবং শহরের রাস্তার উপরকার চাপ কমানো সম্ভব। রাজ্য এই নিয়ে সবিস্তার পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

কী এই রো-রো?

রো-রো হল ট্রেলার, ট্রাক, বাস, গাড়ির মতো চাকাওয়ালা যান বহনের বার্জ বা ফেরি পরিষেবা। পুরো নাম ‘রোল-অন/রোল অফ ভেসেল’। আস্ত ট্রেন ফেরির জন্য ১৮৩৩ সালে এই ব্যবস্থার সূচনা হয় স্কটল্যান্ডে। ভারতে এই পরিষেবা প্রথম চালু হয় গত অক্টোবরে, গুজরাতে। ওই রাজ্যের ঘোগ ও দহেজ বন্দরের মধ্যে এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক বার ১০০ গাড়ি এবং ২৫০ জন যাত্রী বহন করা যায়।

বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের মূল রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যে গঙ্গায় ৩০ কিলোমিটার অন্তর জলপথে যোগসূত্র গড়তে হবে। প্রথম পর্বে সাঁকরাইল-গার্ডেনরিচ, বাউড়িয়া-বজবজ, গুপ্তিপাড়া-শান্তিপুর, ত্রিবেণী-কল্যাণী, বৈদ্যবাটী-উত্তর ব্যারাকপুর, হলদিয়া-কেন্দেমারির মতো ১০টি জায়গায় এমন যোগসূত্র তৈরি করতে বলা হয়েছে। নদীর দু’পাশে বড় জেটি তৈরি ছাড়াও সংযোগ-সড়ক এবং অন্যান্য জরুরি পরিকাঠামো তৈরি করলে সামগ্রিক পরিবহণের ভোল বদলে যেতে পারে মনে করছেন পরিবহণ-কর্তারা।

“রো-রো পরিষেবা চালু হলে কলকাতায় যানজট কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের পণ্য পরিবহণ বহু গুণ বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যহানি থেকে রক্ষা পেতে পারে বড়, মাঝারি সেতুগুলি। কমবে নতুন করে বড় সেতু তৈরির প্রয়োজনও,” বলছেন পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক।

রিপোর্ট বলছে, সড়কপথে কিলোমিটার-পিছু প্রতি টন পণ্য পরিবহণে তিন টাকা ২০ পয়সা খরচ পড়ে। জলপথে তা হবে ৪০-৫০ পয়সা। খরচ কমার পাশাপাশি এতে দূষণ ও যানজট কমবে। পরিকাঠামো তৈরি করলে ২৪ ঘণ্টা ওই পরিষেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। পরিবহণ দফতরের খবর, জেটি পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাঙ্ক এক হাজার কোটি টাকা দিতে রাজি। ২০২০ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্প রূপায়ণের জন্য রাজ্যের তরফে চূড়ান্ত পর্যায়ের সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন