তাঁকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে গিয়ে রোজ ভ্যালি মামলায় ধৃত দুই তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাপস পালের সামনে বসিয়ে জেরা করতে চেয়েছে সিবিআই। কিন্তু তার আগেই কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করতে হল রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুকে। বুকে ব্যথা করছে বলে জানানোয় সোমবার গভীর রাতে তাঁকে ভর্তি করানো হয়এসএসকেএম হাসপাতালে। গৌতমকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
কলকাতায় গৌতমের বর্তমান ঠিকানা ছিল প্রেসিডেন্সি জেল। তবে অসুস্থতার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁকে জেলের হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। জেল সূত্রের খবর, গত দিন তিনেক ধরে গৌতম বারবার খোঁজ নিয়েছেন, তাঁকে ভুবনেশ্বরে পাঠানোর নির্দেশ এল কি না। ঘনিষ্ঠ মহলে এ-ও বলেছেন, দুই সাংসদের মুখোমুখি বসার জন্য তিনি মানসিক ভাবে তৈরি নন।
সিবিআই জানিয়েছে, গত ৩০ ডিসেম্বর রোজ ভ্যালি কাণ্ডে তাপস পাল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই চুপ করে গিয়েছিলেন গৌতম। ৩ জানুয়ারি গ্রেফতার হন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে কার্যত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন গৌতম। ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, জেলের ভিতরেই তাঁর উপরে হামলার আশঙ্কা করছেন। তখন তাঁর জন্য পাহারারও ব্যবস্থা করা হয়।
মোবাইলে কথা বলতে দেখা গিয়েছে গৌতমকে। সূত্রের খবর, জেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে নিয়মিত রোজ ভ্যালি কর্তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন অন্য বন্দিরা। তাঁদেরই কারও মোবাইল গৌতম ব্যবহার করছিলেন বলে অভিযোগ।
নিয়ম অনুযায়ী, জেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যেক বন্দি তিনটি করে ফোন নম্বর দিয়ে রাখতে পারেন। সেই নম্বরগুলিতে একমাত্র জেলের ভিতরের টেলিফোন বুথ থেকেই ফোন করতে পারেন তিনি। সেই কথোপকথনও রেকর্ড করে রাখা হয়। এই নজরদারি এড়ানোর জন্যই গৌতম অন্য বন্দিদের মোবাইল ব্যবহার করে বাইরে নিজের ‘বিশ্বস্ত’ এক ব্যক্তিকে নির্দেশ পাঠাচ্ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, গৌতমের সেই নির্দেশ মতোই কয়েক দিন আগে রোজ ভ্যালির সোনার গয়নার ব্যবসা ‘অদ্রিজা’-র সঙ্গে যুক্ত এক কর্মী ময়দানে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন বেশ কিছু নথিপত্র ও ছবি।
জেল সূত্রের খবর, গত তিন দিন ধরে গৌতমের সঙ্গে অন্য বন্দিদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিল না। জেল হাসপাতালের যে শয্যায় তিনি ছিলেন, তার আশপাশের শয্যার বন্দিদেরও দিন তিনেক আগে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কার্যত একা হয়ে যান তিনি। এতে রোজ ভ্যালি কর্তা মানসিক ভাবেও বেশ চাপে পড়ে যান বলে জানাচ্ছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল।
সোমবার সন্ধ্যার পরে তিনি বুকে ব্যথার কথা বলেন। জেলের চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখে ওষুধ দেন। কিন্তু তাতেও সেই ব্যথা কমেনি বলে জানান গৌতম। তখন রাত দেড়টা নাগাদ এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে ভর্তি করা করা হয় গৌতমকে। বুকে ব্যথা ও শরীরে অস্বস্তি— এই ছিল মূল সমস্যা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁর ইসিজি-সহ বিভিন্ন পরীক্ষা হয়েছে।