উত্তরকন্যার হাল কেমন, বেরোল আরটিআই-এ

এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, এত কম পরিকাঠামো নিয়ে উত্তরকন্যা উত্তরবঙ্গের মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছে কী ভাবে? উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, যে ভাবে উন্নয়নের কাজ এগোচ্ছে, তাতে এমন প্রশ্ন তোলার অবকাশই নেই।

Advertisement

রোশনী মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

উত্তরবঙ্গের মানুষকে প্রশাসনিক পরিষেবা পেতে যাতে কলকাতায় আসার ভোগান্তি পোহাতে না হয়, তার জন্যই শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যা গড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক জন অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের অধীনে রাজ্যের ৫২টি সচিবালয়েরই দফতর থাকার কথা ছিল সেখানে। কিন্তু তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) এক ব্যক্তির তোলা প্রশ্নের জবাবে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, উত্তরকন্যায় শুধু শিল্প এবং আবাসন দফতরের একটি করে শাখা সচিবালয় আছে। যার মধ্যে প্রথমটির দায়িত্বে আছেন এক জন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টিগেটর এবং দ্বিতীয়টির প্রধান এক জন অধিকর্তা (ডিরেক্টর)। শিল্প দফতরের ওই শাখা সচিবালয়ে কোনও অনুমোদিত পদ আছে কি না, সেই তথ্য সরকার জানাতে পারেনি। আর আবাসন দফতর জানিয়েছে, উত্তরকন্যার শাখা সচিবালয়ে তাদের কোনও অনুমোদিত পদই নেই!

Advertisement

এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, এত কম পরিকাঠামো নিয়ে উত্তরকন্যা উত্তরবঙ্গের মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছে কী ভাবে? উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, যে ভাবে উন্নয়নের কাজ এগোচ্ছে, তাতে এমন প্রশ্ন তোলার অবকাশই নেই।

বিজেপির সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল আরটিআই করে অর্থ দফতরের রাজ্য জন-তথ্য আধিকারিকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, উত্তরকন্যায় শাখা সচিবালয়ের সংখ্যা কত? সেই শাখা সচিবলায়গুলিতে কতগুলি এলডিএ, ইউডিএ এবং এইচএ অনুমোদিত পদ আছে? তার মধ্যে কত পদ শূন্য? ওই শাখা সচিবালয়গুলির প্রত্যেক প্রধান এবং ডিডিও-র নাম ও পদ কী এবং তিনি কোন ক্যাডারভুক্ত?

Advertisement

তারই জবাবে আবাসন দফতর জানিয়েছে, উত্তরকন্যায় তাদের একটি শাখা সচিবালয় আছে। যার দায়িত্বে আছেন ইটভাটা (ব্রিক প্রোডাকশান) ডিরেক্টরেটের অধিকর্তা বিকাশচন্দ্র বর্মণ। তবে ওই সচিবালয়ে কোনও অনুমোদিত পদ নেই। তাদের আলাদা কোনও ডিডিয়ো নেই। শিল্প দফতর জানিয়েছে, উত্তরকন্যায় তাদের শাখা সচিবালয় চালাচ্ছেন এক জন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টিগেটর। তবে দেবাশিসবাবুর বাকি প্রশ্নগুলির কোনও জবাব তাদের জানা নেই। রাজ্য সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি এবং তথ্য আধিকারিক দেবাশিসবাবুকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর প্রশ্নগুলি কৃষি দফতরের অধিকর্তা (ডিরেক্টর) এবং এক্স-অফিসিও সচিবকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর আবার উত্তরকন্যার তথ্য আধিকারিককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারাই যেন সরাসরি দেবাশিসবাবুকে ওই প্রশ্নগুলির উত্তর জানিয়ে দেয়।

দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মাঝে-মধ্যেই বিরাট দলবল নিয়ে তাঁর সাধের উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে যান। অথচ আরটিআই করে যেটুকু জানা গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, উত্তরবঙ্গের মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো সেখানে তৈরিই হয়নি। ওটা আসলে সরকারি কর্মচারীদের আন্দামান! রাজ্য সরকারের নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে সরকারি কর্মী প্রতিবাদ করেন, তাঁকেই শাস্তি দেওয়ার জন্য ওখানে বদলি করা হয়।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘উত্তরকন্যায় পূর্ত, বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন দফতরের অফিসাররা ডেপুটেশনে আছেন। তাঁরাই সুন্দর ভাবে পরিষেবা দিচ্ছেন। কোথাও মানুষের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন