প্রতীকী ছবি।
বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর মৃত্যুর পর বহু দেহ মর্গেই পড়ে থাকছে। সরকারি ব্যবস্থায় কবে সৎকার হবে তা জানতে পারছেন না পরিজনেরা। কিন্তু এরই ফাঁকে ‘বিকল্প’ ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। কড়ি ফেললেই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তড়িঘড়ি সৎকার হচ্ছে কোভিডে মৃতের। সেই ব্যবস্থায় নেওয়া হচ্ছে ৫-৭ হাজার টাকা। এ ভাবেই দর বেঁধে কার্যত ‘প্যাকেজে’ সৎকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্র সূত্রে খবর, কলকাতা পুরসভার অনুমোদন সাপেক্ষে ৪ জুলাই থেকে দু’টি সংস্থা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শববাহী গাড়িতে দেহ ধাপা, নিমতলা বা হাওড়ার শিবপুরে নিয়ে যাচ্ছে। তেমন একটি সংস্থার প্রতিনিধি শেখ কালুর কথায়, ‘‘যে পরিবারের ক্ষমতা আছে তাদের থেকে সাত হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। কেউ খুব অনুরোধ করলে ছ’হাজার টাকা নেওয়া হয়। একেবারে ক্ষমতা না-থাকলে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।’’ কালুর বক্তব্য, ‘‘পুরসভা সব জানে। দেহ চুল্লি পর্যন্ত নিয়ে যেতে তিন জন ছেলে কাজ করে। এর চেয়ে কম খরচে সম্ভব নয়।’’ আরেকটি সংস্থার প্রতিনিধি আবির চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ কাজে খুব হ্যাপা। সাত হাজার টাকার কমে হয় না। পুরসভার ফ্রি’র গাড়ি পেতে হলে বডি যেমন পড়ে আছে, সেরকম পড়েই থাকবে!’’
হচ্ছেও তাই! ছ’দিন ধরে ৭৯ বছরের বাবার দেহ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন কালনার সুমিত ঘোষ। তিনি জানান, দেহ ধাপায় নিয়ে যাওয়ার জন্য শববাহী গাড়ির লোকেরা সাত হাজার টাকা চান। কিন্তু সেই সংক্রান্ত লিখিত নির্দেশ দেখাতে পারেননি। সুমিতবাবু রাজি না-হলে দেহ না নিয়েই গাড়ি চলে যায়! শনিবার মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি জানতে পারেন, বাকি দুই মৃতের পরিজনেরা পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে সৎকার করেছেন।
আরও পড়ুন: এক দিনে আক্রান্ত ২১৯৮, উদ্বেগের কিছু নেই: মুখ্যসচিব
বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কোভিড রোগীর দেহ তাঁদের হেফাজতে থাকলেও তা সৎকার বা পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়ার অধিকার পুরসভার হাতেই রয়েছে। কোভিড কো-অর্ডিনেটর মণিরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘দেহের চাপ সামলাতে কয়েকটি সংস্থাকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কোভিড দেহ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে সাত হাজার টাকা কেউ চাইছে না।’’
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর এক কর্তার বক্তব্য, কোভিড দেহ সৎকারের ক্ষমতা অতিক্রম করে গিয়েছে পুরসভা। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে তিনটি পদ্ধতি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। দেহ ধাপা বা অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শববাহী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। নিজেদের অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়িতে দেহ ধাপায় পাঠাতে পারেন। পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগও রয়েছে। তবে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের একাংশের বক্তব্য, শেষযাত্রা নিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি শনিবার রাত পর্যন্ত তাঁরা পাননি।