2020 Kolkata International Book Fair

ধ্বংস-সৃষ্টির অতীতেই নতুনের রুশ অন্বেষণ

রাশিয়া বইমেলার থিম দেশ হলে সোভিয়েট জমানার অভিঘাতের কথা ঊহ্য থাকে কী ভাবে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৪২
Share:

বক্তা: বইমেলায় ‘অশোককুমার সরকার স্মারক বক্তৃতা’য় ভাদিম পোলোনস্কি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ধীর লয়ে মসৃণ মন্থর বিবর্তন নয়। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে নিজেকে চকিতে ভেঙেচুরে এগোয় রাশিয়ার ইতিহাস। রুশ সাহিত্যও অনেকাংশে ধ্বংসের ফসল। বৃহস্পতিবার কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ‘অশোককুমার সরকার স্মারক বক্তৃতা’র আসরে ভাদিম পোলোনস্কি বলছিলেন, ‘‘বিশ শতকের রুশ সাহিত্য মানেই বার বার ধ্বংস এবং সৃষ্টির দলিল।’’

Advertisement

রাশিয়া বইমেলার থিম দেশ হলে সোভিয়েট জমানার অভিঘাতের কথা ঊহ্য থাকে কী ভাবে! তার উপরে বক্তৃতার বিষয়বস্তু যখন বিশ শতকের রুশ সাহিত্য। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অধীন ভাষা ও সাহিত্য কাউন্সিলের সদস্য ভাদিম। তিনি মস্কোর গোর্কি ইনস্টিটিউট অব ওয়র্ল্ড লিটারেচরের ডিরেক্টর এবং রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসেরও সদস্য। বিশ শতকের রুশ ইতিহাসের পটভূমিতে রুশ সাহিত্যকে একাধারে এক ধরনের ‘মহাপ্রলয়ের ঘূর্ণিঝড়ের তৃষ্ণা এবং নতুন জগতের সৃষ্টি’ হিসেবেই তুলে ধরলেন ভাদিম।

সোভিয়েট জমানার সঙ্গে আজকের রাশিয়ার সম্পর্কও উঠে এল সেই বয়ানেই। ভাদিমের কথায়, ‘‘রুশ ইতিহাসের অভিযাত্রায় কোনও মন্থর বিবর্তন নেই, পুরোটাই বিপ্লবের প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। জাতীয় ইতিহাসের কঠিন বেদনার একটি পর্ব থেকে অন্য বেদনার পর্বে তার পদার্পণ। প্রতিটি পর্বান্তরে সংস্কৃতি নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে চায় অতীতের ছোঁয়াচ শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলে। কিন্তু অতীতকে এ ভাবে বর্জনের মধ্যে অতীতের সঙ্গে এক ধরনের জটিল সংযোগই নতুন করে জেগে ওঠে।’’ তাঁর মতে, ১৯১৭-র রুশ বিপ্লব এবং ১৯৯১-এ সোভিয়েট জমানার পতন— ইতিহাসের দু’টি দিকচিহ্ন আলাদা মাত্রায় বেঁধে দিয়েছে রুশ সাহিত্যকে।

Advertisement

বিশ শতকের গোড়ায় রাশিয়ার সংস্কৃতি পুশকিনদের স্বর্ণযুগের ধ্রুপদী রুশ সাহিত্যের স্মৃতি উস্কে দেয়। চাইকোভস্কি, রুশ ব্যালের মূর্ছনা, চেকভ, টলস্টয়দের ধারা বয়ে চলেছে সেই রাশিয়া। ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ, ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যে আগ্রহ মিশে আছে সেই রাশিয়ায়। সম্ভ্রান্তদের অবক্ষয়ের পাশাপাশি গোর্কির খালি-পা ভিখারি, গৃহহারা অস্পৃশ্যেরাও তখন সাহিত্যের চরিত্র হয়ে উঠছেন। সৃষ্টির এই সৌধের উপরে রুশ বিপ্লবের অভিঘাতের সঙ্গে বাইবেলের মহাপ্রলয়ের তুলনা টানলেন ভাদিম। তিনি বলেন, ‘‘বিপ্লব-পরবর্তী রুশ সাহিত্যও গোগোল থেকে ডস্টয়েভস্কির লেখনীর রোম্যান্টিসিজম বা ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টার ছোঁয়া বহন করেছে। কিন্তু তা ক্রমে ক্লিশে জ্ঞানগম্যি ভরা ভাষ্য হয়ে উঠছিল।’’

তবে বিশ শতকের দুই নোবেলজয়ী সাহিত্যিক— সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী মিখাইল শলোকভ এবং সোভিয়েট জমানার বিরোধী আলেকজ়ান্দর সলঝেনিৎসিনের ঐতিহ্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ভাদিম। তাঁর কথায়, ‘‘সাংস্কৃতিক পরম্পরায় পুশকিন, গোগোল, টলস্টয়, ডস্টয়েভস্কির ধারা বহনে তাঁরা দু’জনেই ভ্রাতৃপ্রতিম।’’ আজকের রাশিয়াও কিন্তু জমানা বদলের পরে নতুন করে সোভিয়েট জমানার স্মরণীয় কিছু বই পুনর্মুদ্রণের কথা ভাবছে এ বারের বইমেলায়, বলছেন রুশ কর্তারা। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে রাশিয়া যে বার বার তার ধ্রুপদী সাহিত্য-সংস্কৃতিকেই নতুন করে আবিষ্কার করেছে, এ দিন সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভাদিমও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন