Saayoni Ghosh

ইডি দফতরে নয়, সায়নী গেলেন বর্ধমানের গলসিতে প্রচারে, আগেই ইমেলে জানিয়েছিলেন ইডিকে

সায়নীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি যে বুধবার ইডি দফতরে যেতে পারছেন না, তা মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মেল করে তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩ ১২:২১
Share:

গলসিতে ভোটপ্রচারে সায়নী ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

ইডির দ্বিতীয় দফার ডাকে বুধবার সিজিও কমপ্লেক্সে যাচ্ছেন না তৃণমূল যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ। সায়নীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি যে বুধবার ইডি দফতরে যেতে পারছেন না, তা মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মেল করে তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়ে দিয়েছেন। ইডি দফতরে না গেলেও বুধবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে তৃণমূলের ভোটপ্রচারে দেখা গিয়েছে সায়নীকে। গলসিতে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে সায়নী বলেন, “ইডিকে নথি পাঠিয়ে দিয়েছি। বলেছি প্রয়োজনে ভার্চুয়ালি যোগ দেব। কিন্তু ভোটের মাত্র দু’দিন বাকি। দলের যুব সভানেত্রী হিসাবে আমার একটা দায়িত্ব আছে।” এই প্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন, “১১ তারিখের পর, যত বার ডাকবে, তত বার যাব।”

Advertisement

বুধবার সকালে সায়নীর হাজিরা নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং তৃণমূল যুবনেত্রীর সঙ্গীর পরস্পরবিরোধী দাবির পর, সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ এক ব্যক্তিকে সিজিও কমপ্লেক্সে ঢুকতে দেখা যায়। সংবাদমাধ্যমের তরফে প্রশ্ন করা হয়, তিনি সায়নীর আইনজীবী কি না। প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলেন ওই ব্যক্তি। তবে সায়নী বুধবার হাজিরা দেবেন কি না, এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি তিনি। তাঁর হাতে তিনটি ফাইল ছিল। যা থেকে মনে করা হয়, নিজে উপস্থিত না থাকলেও তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য আইনজীবী মারফত ইডি আধিকারিকদের ৫৩০ পাতার নথি পাঠিয়ে দিলেন সায়নী।

বুধবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছিলেন, সায়নী এখন ভোটের কাজে ব্যস্ত। ভোট মিটলে সায়নী ইডি দফতরে যাবেন বলে দাবি করেন কুণাল। বলেন, যেতে না পারার কারণ জানিয়ে সায়নী ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন ইডিকে। যদিও ইডি সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১টা পর্যন্ত এমন কোনও চিঠি হাতে পায়নি তারা। অন্য দিকে, সায়নীর সঙ্গে আগের দিন যিনি সিজিও কমপ্লেক্সে এসেছিলেন, সেই সঙ্গী জানান, সায়নী ইডি দফতরে যথা সময়েই হাজিরা দেবেন। ঘটনাচক্রে, সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ গল্ফগ্রিনের ফ্ল্যাট থেকে সায়নীকে বেরোতে দেখা যায় বলেও একটি সূত্র মারফত জানা যায়।

Advertisement

শুক্রবার ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার পর জনসমক্ষে দেখা যায়নি তৃণমূলের যুব সভানেত্রী সায়নীকে। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানে দলের নির্দেশে প্রচারে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সায়নী যাননি। দলকে জানান, তাঁর মা অসুস্থ। তার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, বুধবার ইডির দফতরে কি হাজিরা দেবেন তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ? বিষয়টি নিয়ে ‘কৌতূহল’ ছিল তৃণমূলের অন্দরেও। ইডি সূত্রে জানা যায়, বুধবার সায়নীকে কিছু নথিপত্র সংক্রান্ত প্রশ্ন করতেই ডাকা হয়েছে। মায়ের অসুস্থতার কারণে আদৌ কি তিনি যেতে পারবেন, না কি আইনজীবীর মাধ্যমে নথি পাঠিয়ে দেবেন, এ বিষয়ে সায়নী কিছুই জানাননি। তবে ইডির এক সূত্রের মতে, সায়নী নিজে না আসতে পারলে, তা লিখিত ভাবে তদন্তকারী সংস্থাকে জানাতে হবে। কুণালের বক্তব্য মোতাবেক, সায়নী যা করেছেন।

গত শুক্রবার সাড়ে ১১ ঘণ্টা পর সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতর থেকে বেরোন যুব তৃণমূল নেত্রী সায়নী। সাংবাদিকদের সামনে তিনি জানান, তদন্তে একশো শতাংশ সহযোগিতা করেছেন। আগামিদিনে তদন্তকারী সংস্থা আবার তাঁকে তলব করলে তিনি আসবেন বলেও জানান। তদন্তের প্রয়োজনে ১১ কেন, ২৪ ঘণ্টা তিনি ইডি দফতরে থাকতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছিলেন সায়নী। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ইডি দফতরে অভিনেত্রী-নেত্রীকে তাঁর সম্পত্তি এবং লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিয়োগ মামলার তদন্তকারী আধিকারিক-সহ অন্যান্যরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এঁদের মধ্যে মহিলা আধিকারিকেরা ছিলেন। ব্যাঙ্কের নথি, আয়কর রিটার্ন, সম্পত্তির নথি লেনদেনের তথ্য আনতে বলা হয়েছিল সায়নীকে। বেশ কিছু নথি এনেওছিলেন তিনি। কুন্তলের থেকে টাকা পেয়েছেন কি না, কোনও আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন কি না, কুন্তল তাঁর কোনও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেছিলেন কি না, বা কোনও অনুষ্ঠানের খরচ বহন করেছিলেন কি না, সে সব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে।

ইডি সূত্রে খবর, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে ধৃত তথা তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তলের সূত্র ধরেই উঠে আসে তৃণমূল যুবনেত্রী সায়নীর নাম। কুন্তলের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার সময় সায়নীর নাম উঠে এসেছে বলে ইডি সূত্রে জানা যায়। আর সেই বিষয়েই যুব তৃণমূলের সভানেত্রীকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। ইডি সূত্রে এ-ও জানা যায়, সায়নীকে আয়কর জমা দেওয়ার ফাইল এবং সম্পত্তির হিসাব নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। যুবনেত্রীর যত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তার তথ্য এবং লেনদেনের নথিও নাকি আনতে বলা হয়েছিল। এর আগে কুন্তলের সঙ্গে যুবনেত্রীর একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল (সেই ছবির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। সায়নী তখন জানিয়েছিলেন, তাঁরা দু’জনেই একই দলের সদস্য। তাই এক মঞ্চে থাকতেই পারেন। যদিও সে সময় কুন্তল তৃণমূলের সদস্য হলেও এখন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কুন্তলের যোগসূত্র ধরেই নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে সায়নীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন