লালবাগে কাটা চন্দন গাছের সামনে ভিড়। — নিজস্ব চিত্র।
শ্বেত-চন্দন না হোক রক্ত-চন্দনই সই!
দক্ষিণ ভারতের শ্বেত-চন্দন দস্যুর দাপট নয়, তবে গত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলায় চন্দন-চুরির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে এবং তা ঘন ঘন।
মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক মাসে কখনও রাতের অন্ধকারে নিশ্চুপে কখনও বা প্রহরীর মাথায় রিভলভার ধরে রাতারাতি কাটা হয়েছে চন্দন গাছ। যাদের বয়স অন্তত অর্ধ শতাব্দী।
তালিকায় রয়েছে বোলপুর-শান্তিনিকেতনও। নিঃশব্দে বীরভূমের এই দুই পর্যটন মানচিত্র থেকেও কাটা হয়েছে রক্ত চন্দনের বেশ কয়েকটি গাছ।
দু’জেলাতেই পুলিশে নালিশ জানিয়েও ফল মেলেনি। নির্বিকার জেলা পুলিশ মাস ঘুরে গেলেও সে চুরির কিনারা করতে পারেনি।
এক বন কর্তার কথায়, ‘‘কিনারা করার ইচ্ছে থাকলো তো করবে!’’ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়েই চন্দন গাছ চুরি যাচ্ছে বলে তাই অভিযোগও উঠেছে।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর এলাকায় গত সাত দিনে অন্তত চারটি রক্ত চন্দন গাছ কেটে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। একটিকে আধ-কাটা অবস্থায় ফেলে রেখে চম্পটও দিয়েছে তারা। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দুবিকাশ হীরা বলছেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, চন্দন গাছ চুরির সঙ্গে একটি বিশেষ চক্রের যোগ রয়েছে।’’
ছবিটা প্রায়একই রকম পড়শি জেলা বীরভূমে। চন্দন গাছ চুরি গিয়েছে সেখানেও। এবং পুলিশ নিয়ম মাফিক ঢঙে কোনও ‘চক্রের’ দিকে অভিযোদের আঙুল তুলেছে। তবে তদন্ত এগোয়নি।
মুর্শিদাবাদ কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এমসিইটি)-র ক্যাম্পাসে গত রবিবার গভীর রাতে হানা দিয়েছিল জনা দশেকের একটি সশস্ত্র দল। কলেজের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সঞ্জীব রায় বলেন, ‘‘বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দু’জন নৈশ প্রহরীর মাথায় পিস্তল ধরে ব্যাটারি চালিত করাত দিয়ে প্রায় ৫০ বছরের প্রাচীন চন্দন গাছটি কেটে নিয়ে গেল ওরা।’’
জেলার পুলিশ সুপারের বাংলোর পাশেই বহরমপুর গার্লস কলেজ। কলেজের পাশেই শিক্ষিকাদের আবাসন। কলেজ ও আবাসনের মাঝেই ছিল বছর চল্লিশের প্রাচীন একটি চন্দন গাছ। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শ্রীলতা চৌধুরী বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে গাছটি কেটে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। নৈশ প্রহরীও কিছু বুঝতে পারেনি।’’
লালবাগের হাজারদুয়ারি ও ইমামবাড়া লাগোয়া এলাকায় রয়েছে ব্রিটিশ আমলের দোতলা ‘ফক্সেস কুটির’। তার পাশেই একটি বেসরকারি হোটেল থেকে খোয়া গিয়েছে চন্দন গাছ। এবং তা রাতারাতি।
বছর কয়েক আগে শান্তিনিকেতনে চুরি গিয়েছিল একটি চন্দন গাছ। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার হদিশ করেছিলেন বন কর্মীরা।
তবে, ২০১৩ সালে শান্তিনিকেতনের খোদ উত্তরায়ণ কমপ্লেক্স থেকে চুরি গিয়েছিল দু’টি চন্দন গাছ। এবং চলতি বছর উত্তরায়ণ লাগোয়া শ্রীপল্লি এলাকা থেকে একই বাবে কারা যেন নিপুণ ভাবে কেটে নিয়ে গিয়েছে আরও দু’টি রক্ত চন্দনের গাছ।
বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা বিভাগ এবং বোলপুর পুলিশ লাইন, এমনকী সম্প্রতি বীরভূমের ডিএফওর বাংলো থেকেও একই ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছে দুটি চন্দন গাছ।
বন দফতরের খবর, চন্দন কাঠ সাধারণত কেজি দরে বিক্রি হয়। রক্ত চন্দন কেজি প্রতি ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বাজারে কেজি প্রতি শ্বেত চন্দনের মূল্য সে জায়গায় ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা।
বিভিন্ন সুগন্ধী থেকে পাউডার, এমনকী সৎকারের ক্ষেত্রেও ওই কাঠ ব্যবহার করা হয়। বন দফতরের অনুমান, দক্ষিণের ওই দুই জেলায় জেলায় কোনও চক্র অবশ্যই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এক বন কর্তার দাবি, ‘‘তবে সে ব্যাপারে পুলিশের উদ্যোগ না থাকলে তা োখা যাবে কী করে!’’