পদপিষ্ট হয়ে মৃত ভাইকে নিতে হাসপাতালে দাদা নাসিরুদ্দিন (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।
‘দাদা সাঁতরাগাছিতে ট্রেন ঢুকছে। রাত ১০ টার মধ্যে বাড়ি চলে যাব। তোমাদের ছেড়ে বাইরে কাজে যেতে আর ভাল লাগছে না। ওখানে কাজ নেই।’
ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হওয়ার আগে দাদার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে এমনই আক্ষেপ করছিলেন তাসের সর্দার। ছোটবেলা থেকে দাদা নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করে এসেছেন তাসের। বলা যায় দাদাই তাঁকে ইট গাঁথতে শিখিয়েছেন। দাদার হাতেই হয়ে উঠেছিলেন বাড়ি তৈরির পাকা কারিগর।
বুধবার সেই দাদাই হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভাইয়ের দেহ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়়লেন। এক চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে নাসিরুদ্দিনের।ভাঙা শরীরে তবুও ছুটে এসেছেন তিনি। তাসেরের ছেলে থাকলেও, একটি অপারেশন হওয়ায় বাবার দেহ নিতে আসতে পারেননি।
দেখুন ভিডিয়ো
তাসেরের মৃত্যুর খবরে মুর্শিদাবাদের নসিপুরে এখন শোকের ছায়া। নাসিরুদ্দিনের কথায়,“সন্ধের মুখে হঠাৎ একটা ফোন আসে। কেউ একটা বলে, ‘আপনার ভাই সাঁতরাগাছিতে চাপা পড়়েছে’। তার পর আর সেই ফোনে যোগাযোগ করতে পারিনি। ঘরে টিভি চলছিল। দেখি সত্যিই তো, সাঁতরাগাছিতে ভিড়ে হুড়োহুড়িতে কী যেন একটা হয়েছে। অনেকে চাপা পড়েছে বলে খবরে দেখাচ্ছে। আর ঘরে বসে থাকতে পারছিলাম না।”
আরও পড়ুন: স্টেশনে একসঙ্গে ৮টি ট্রেন, প্রবল ঠেলাঠেলিতে সাঁতরাগাছিতে পদপিষ্ট, মৃত ২
তাসেরের সঙ্গে তার পর থেকে আর ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তাঁর পরিবারের সদস্যরা। স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলের সংসার তাসেরের।
কিছুদিন আগেই জমানো টাকা খরচ করে (প্রায় তিন লক্ষ) ছেলের চিকিৎসা করিয়ে ছিলেন তাসের। সম্বলহীন হয়ে পড়েছিলেন। তাই টাকার প্রয়োজনেইবাড়ি ছাড়তে হয়েছিল ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধকে। কেরলে রাজমিস্ত্রির চাহিদা বেশি। তাই গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না।
মৃত তাসেরে মামাতুতো ভাই মইনুল ইসলাম বলেন, “ কিছু দিন আগেই শরীর খারাপ হয়েছিল। কেরলেই চিকিৎসা হয়। এর পর হাত একেবারে খালি হয়ে গিয়েছিল বলে পরিবারকে জানায় দাদা। ফোনে বউদিকে বাড়ি চলে আসবে বলেও জানিয়েছিল।কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি এভাবে ওঁকে চলে যেতে হবে।”
আরও পড়ুন: পটেল জয়ন্তীতে ইউজিসি-কে ‘না’ পার্থের
ক্ষতিপূরণের কথা শুনেছেন পরিবার। রেল এবং রাজ্য সরকারের তরফে ৫ লক্ষ করে মোট দশ লক্ষ টাকা পাবেন। আবেগতাড়িত হয়ে তাসেরের আত্মীয়-স্বজনেরা বললেন, “টাকার জন্যই ভিন রাজ্যে পড়েছিলেন টানা ৫৬ দিন। সংসারের জন্যই। খেটে সেই টাকা রোজগার করতে না পারলেও, নিজের প্রাণ দিয়ে পরিবারের জন্য সেই টাকার ব্যবস্থা করে গেলেন তাসের ভাই! আমরা এই টাকা কী ভাবে নেব বলতে পারেন?”
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)