রাজীব কুমার।
সারদা তদন্তে রাজীবকুমার-সহ সিনিয়র আইপিএস অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআইয়ের কাছে পাঠাতে চায় না রাজ্য পুলিশ। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত ২৮ অগস্ট সিবিআই অধিকর্তা অলোককুমার বর্মাকে এক চিঠিতে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র লিখেছেন, ‘প্রয়োজনে প্রশ্নমালা পাঠাক সিবিআই। সংশ্লিষ্ট অফিসাররা চটজলদি জবাব দেবেন। এতেও সন্তুষ্ট না-হলে আলোচনা সাপেক্ষে নির্দিষ্ট দিন এবং স্থানে সিবিআইয়ের সঙ্গে ‘সিট’-এর (সারদা তদন্তে রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল) সদস্যরা বৈঠকও করতে পারেন। তবে তাঁদের পদমর্যাদা মাথায় রেখে প্রতিনিধি পাঠাতে হবে।’
সিবিআই অধিকর্তাকে আশ্বস্ত করে ডিজি লিখেছেন, ‘তদন্ত সংক্রান্ত যা নথি আছে, সব দিয়ে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু আপনিও দেখুন, যাতে অসৎ উদ্দেশ্যে, পক্ষপাতিত্ব করে বা পূর্বনির্ধারিত ধারণা থেকে তদন্ত প্রভাবিত না হয়। ...সিনিয়র অফিসারদের সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকাও জরুরি।’ প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের কলকাতার চতুর্থ অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখার প্রধান ‘সিট’-এর অফিসারদের ডেকে পাঠিয়েছেন। অন্য চিঠিতে সিট-এর সিনিয়র সদস্যদেরও ডাকা হয়েছে।
‘সিট’-এর সদস্য চার আইপিএস-কে ফের ডাকা হবে, না কি আদালতে ‘অসহযোগিতা’র কথা জানানো হবে, তা সিবিআই আইনজীবীরা আলোচনা করছেন বলে খবর। এক কর্তা বলেন, ‘‘ডিজির অনুরোধ সর্বোচ্চস্তরে বিবেচিত হচ্ছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে দ্রুত তদন্ত শেষ করা আমাদের কাজ। সুদীপ্ত সেনের ‘ডায়েরি’ বা মিডল্যান্ড পার্ক থেকে উদ্ধার হওয়া ২২টি ট্রাঙ্ক বোঝাই নথি কোথায় গেল, তা জানা দরকার।’’ তাই নিচুতলার তদন্তকারীদের ডাকা শুরু হয়েছে। সেই সূত্রে বিধাননগর কমিশনারেটের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষকেও তলব করা হয়েছে বলে জানান সিবিআই কর্তারা।
ডিজি লিখেছেন, ২০১৭-এর ১৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ‘কোনও মামলায় রাজ্যের পুলিশ সিবিআই অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাবে, এটা সুখকর পরিস্থিতি নয়। দুই সংস্থা পরস্পরের সঙ্গে থেকে (ইন ট্যানডেম) কাজ করবে, সেটাই বাঞ্ছনীয়। একই ভাবে সিবিআই রাজ্য পুলিশের অফিসারদের ডেকে পাঠাবে, সেটাও কাম্য নয়।’ চিঠিতে ডিজির অভিযোগ, ‘সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ একপ্রকার না-মেনেই সিবিআই তদন্তকারী অফিসার ও সিনিয়র আইপিএসদের হাজির করাতে বলে চিঠি লিখেছে। আমরা যৌথ বৈঠকের প্রস্তাব দিই। তা বিবেচনাধীন বলে ৭ অগস্ট জানানো হয়। তারই মধ্যে আইপিএসদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে আবার চিঠি এসেছে।’
ডিজি লিখেছেন, ‘কিছু নথি না-পাওয়া বা নষ্ট করে দেওয়ার সূত্রে আইপিএসদের জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি বলা হয়েছে। সেই সব অভিযোগ অস্পষ্ট ও অসম্মানজনক।’ তিনি এ-ও লিখেছেন, ‘সিবিআইয়ের গোপন চিঠি ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে। এতে অফিসারদের সম্মানহানি হচ্ছে। এক ধরনের মিডিয়া-ট্রায়ালের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে অফিসারদের।’
অন্য দিকে, রাজ্য পুলিশ প্রথা মেনেই কাজ করে বলে দাবি করে ডিজি লিখেছেন, রোজভ্যালি তদন্তে গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী’র ১৫ কোটি টাকা সরানোর তদন্তে এক ইডি কর্তাকে গ্রেফতার করে নিয়ম মেনে সিবিআই এবং ইডি-কে জানানো হয়েছিল।’