—প্রতীকী অলংকরন।
সপ্তাহের প্রথম দিন। বেলা প্রায় ১১টা। ব্যস্ত রাধামোহনপুর স্টেশন চত্বরে হঠাৎই শোরগোল। স্টেশনের মধ্যেই এক যুবক প্রাণপণে দৌড়চ্ছে। তাকে ধাওয়া করছে বেশ কয়েক জন।
খানিক পরে ধরাও পড়ে গেল ওই যুবক। তার হাত দু’টো পিছমোড়া করে বেঁধে মাথায় গলিয়ে দেওয়া হল বালিশের খোল। তার পর সটান তোলা হল গাড়িতে।
স্টেশন চত্বরে ততক্ষণে ভিড় জমেছে। সেই জমায়েতে গুঞ্জন, ‘‘সিনেমার শুটিং হচ্ছে নাকি!’’
বেশ খানিকটা পরে জানা গেল সত্যিটা। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারীকে ডেবরার রাধামোহনপুর স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এ দিন। সিআইডি-র লোকজনই পিছু নিয়েছিল অভিজিতের। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ হাওড়া-মেদিনীপুর লোকাল রাধামোহনপুর স্টেশনে পৌঁছনোর পরে অভিজিৎ সেখানে নামে। তার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘অপারেশন অভিজিৎ’-এ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। সিআইডি ও নদিয়া পুলিশের একটি দলও পৌঁছে গিয়েছিল যথা সময়ে। অনেক আগেই সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীরা ঘিরে ফেলেছিলেন রাধামোহনপুর স্টেশন চত্বর। যাতে সন্দেহ না হয় সে জন্য পুলিশের গাড়ি পর্যন্ত আনা হয়নি।
সিআইডির কাছে খবর ছিল, রাধামোহনপুরেই নামবে অভিজিৎ। হাওড়া-মেদিনীপুর লোকালে তাকে অনুসরণ করছিল সিআইডি-র অন্য একটি দল। বিধায়ক খুনে মূল অভিযুক্ত স্টেশনে নামতেই পিছু নিয়ে পাকড়াও করা হয় তাকে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘স্টেশনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, ছুটে এসে একজনকে খপ করে ধরল কয়েক জন। সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘আপনারা কারা?’ ওঁরা বললেন, সিআইডির লোক। নদিয়ার বিধায়ক খুনের তদন্তে এখানে এসেছেন।’’
অভিজিৎকে ধরার খবর মুহূর্তে ছড়ায় স্টেশন লাগোয়া রাধামোহনপুর বাজারে। স্টেশনের ঢোকার মুখেই রয়েছে রঞ্জিত মণ্ডলের কাপড়ের দোকান। রঞ্জিত বলেন, “আমরা তো আগে কিছুই বুঝিনি। সিআইডি সাদা পোশাকে ছিল। পরে দোকানের পাশ দিয়েই ধৃতকে মুখ ঢেকে হাঁটিয়ে রেলগেট পর্যন্ত নিয়ে যায়। পরে সব জানতে পারি।”
গত ৯ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে নদিয়ার মাজদিয়া ফুলবাড়ি এলাকায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ এতদিন পলাতক ছিল। তাঁর খোঁজে ছবি পাঠানো হয় জেলায় জেলায়। রেল পুলিশের কাছেও ছবি পাঠানো হয়। অভিজিৎ রাধামোহনপুরে গা ঢাকা দিয়ে ছিল, না এ দিনই রাধামোহনপুরে এসেছিল, সে নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছে। পুলিশও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। সিআইডিও মুখ খোলেনি। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী শুধু বলেন, “রাধামোহনপুর স্টেশন থেকে সিআইডি একজনকে গ্রেফতার করেছে। ওঁরা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। সেই মতো আমাদের পুলিশ রাধামোহনপুরে ছিল।”
তবে পুলিশের এক সূত্র জানাচ্ছে, মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই জানা গিয়েছিল, অভিজিৎ রাধামোহনপুরে রয়েছে। এর পরই তাকে ধরতে জাল পাতেন তদন্তকারীরা। ডেবরার রাধামোহনপুরেই বাড়ি তৃণমূলের জেলা নেতা অলোক আচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন এলাকায় ছিলাম না। শুধু শুনেছি ওই যুবক না কি হাওড়া থেকে ট্রেনে করে এখানে এসেছিল।’’